কঠোর বিধি
২ মার্চ ২০১২সাতাশটি ইইউ দেশের মধ্যে ২৫টি দেশ নতুন এই চুক্তিতে সই করেছে৷ এর ফলে এখন থেকে নিজ নিজ দেশের বাজেট প্রণয়নে সরকারগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে৷ গ্রিসের মতো পরিস্থিতি যেন আর তৈরি না হয়, সেজন্য আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বনের এই চুক্তি করা হয়েছে৷
ইইউ'র সদস্য হওয়ায় গ্রিসের সমস্যা পুরো ইউরোজোনের উপরই প্রভাব ফেলেছে৷ ফলে নতুন চুক্তিতে কোনো দেশের বাজেট ঘাটতি যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ ব্রিটেন আর চেক প্রজাতন্ত্র এই কঠোর বিধির মধ্যে যেতে চায়নি৷ তাই তারা চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছে৷
এদিকে চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোজোনের অনেক শীর্ষ নেতা৷ যেমন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি মনে করছেন, এর ফলে ইউরো সংকট মোকাবিলায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান হোসে মানুয়েল বারোসো বলছেন, অনেকদিন পর এমন একটা শীর্ষ সম্মেলন হলো যেটাকে শুধুই, ইউরো সংকটময় সম্মেলন বলা হচ্ছে না৷ কেননা এবার ইউরোপের প্রবৃদ্ধি ও বেকারত্ব নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷
ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও বারোসোর মন্তব্যের সুর শোনা গেছে৷
তবে নতুন চুক্তির অন্যতম কারিগর ও ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলছেন, ‘‘আমরা এখনও ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে আছি৷ আমরা কিছুটা এগিয়েছি, কিন্তু সব সমস্যা মিটে গেছে -- এমনটা বলার সময় এখনো আসেনি৷''
ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমরা যে সমস্যা থেকে শিক্ষা নিচ্ছি এবং ভবিষ্যতে, রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি ইউরোপের স্বপ্ন দেখছি, নতুন চুক্তি স্বাক্ষর তারই একটা উদাহরণ৷''
জার্মান চ্যান্সেলরের মতো সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসিবি'র প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাঘি৷ ইটালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান বলেছেন তৃপ্ত হওয়ার সময় এখনো আসেনি৷ শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া তাঁর বক্তব্যে দ্রাঘি, ম্যার্কেলের মতোই বলেন যে, পরিস্থিতি এখনো ভঙ্গুর৷
তবে ইইউ প্রেসিডেন্ট হ্যার্মান ফন রম্পয় মনে করছেন, নতুন চুক্তি ইউরোপের প্রতি সারা বিশ্বের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনবে৷
কিন্তু ইইউ নেতাদের এই স্বস্তি বোধ হয় ক্ষনিকের জন্য৷ কেননা হল্যান্ড আর স্পেনের অর্থনীতি নিয়ে যে পরিসংখ্যান বেরিয়েছে তাতে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ কেননা যে দুটি দেশ গ্রিসের কট্টর সমালোচক ছিল, তাদের অর্থনীতিতেই গ্রিসের ছায়া দেখা যাচ্ছে৷ হল্যান্ডের এ বছরের বাজেট ঘাটতি ধারনার চেয়েও বেশি হারে বাড়বে বলে জানানো হয়েছে৷ তাই সঙ্গে সঙ্গেই এর সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় কমিশন৷
এদিকে স্পেন বলে দিয়েছে, এবছর ইইউ'র সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব নয়৷ সিদ্ধান্তটা হচ্ছে, একটা দেশের সর্বোচ্চ বাজেট ঘাটতি তার জিডিপি'র ৪.৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, এর বেশি নয়৷ কিন্তু স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী এ বছরের জন্য যে বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ করেছেন সেটা হচ্ছে ৫.৮৷ অর্থাৎ ইইউ'র লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি৷ স্পেন বলছে, ২০১১ সালে বাজেট ঘাটতি ছিল ৮.৫১ শতাংশ৷ সেখান থেকে এক লাফে ৪.৪ শতাংশে নেমে যাওয়াটা সম্ভব নয়৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ