ইউরো এলাকার সংকটের সমাধান খুঁজছে বিশ্ব
২০ জুন ২০১২চলতি সপ্তাহে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পুঁজিবাজারের উপর প্রভাব ফেলছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই গ্রিসের নির্বাচনের ফলাফল৷ তবে স্পেন ও ইটালির সংকটের কারণে সামগ্রিকভাবে বাজার এখনো তেমন শান্ত হতে পারছে না৷ সোমবার বন্ড বাজারে এই দুই দেশেরই সুদের হার অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল৷ অর্থাৎ বাজার থেকে ঋণ নিতে এই দুই দেশকে চড়া সুদ দিতে হচ্ছে৷
বাজারে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়েছে, কারণ গ্রিসের নতুন জোট সরকার ঋণ শোধ করবে এবং সংস্কার চালিয়ে যাবে – এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এরই মধ্যে ঋণের খোলা বাজারে গ্রিসের জন্য চড়া সুদের হার কিছুটা কমে গেছে৷ গ্রিস আপাতত স্থিতিশীল হলে ইউরো এলাকা ছেড়ে সে দেশের প্রস্থানের আশঙ্কা এবং তার পরিণতি নিয়ে আর ভাবতে হবে না৷ তখন ইউরোজোনের অন্যান্য সমস্যার প্রতি মন দেওয়া যাবে৷ নির্বাচনের আগে কড়া সুরের পর গ্রিস'কে এখন কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথাও হচ্ছে৷ তা বলে নিয়ম শিথিল করা হবে না৷ শুধু সংস্কার কার্যকর করার সময়সীমা কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে৷
জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীর যে সব দেশে ইউরো চালু আছে, সে সব দেশের নেতারা বলেছেন, ইউরো এলাকার স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাঁরা সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত৷ বাকিরাও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ মেক্সিকো সম্মেলনে অবশ্য একটি বিষয় নিয়ে ইউরোজোন বনাম বাকিদের সংঘাত দেখা গেছে৷ অনেকের অভিযোগ, ইউরোপ শুধু বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত – অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না৷ জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে মানুয়েল বারোসো কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, এটাই সঠিক পথ৷ বাইরে থেকে এ নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না৷ বারোসো বলেন, ‘‘জি-টোয়েন্টির কিছু দেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তফাত হলো, ইইউ'র দেশগুলি গণতান্ত্রিক৷ আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিই৷ কখনো একটু বেশি সময় লাগে বটে৷ ২৭টি গণতান্ত্রিক দেশের জোট বলে কথা! সত্যি কথা বলতে কি আমরা এখানে গণতন্ত্র বা অর্থনীতির পাঠ নিতে আসি নি৷''
বারোসো এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ'এর সর্বোচ্চ অর্থদাতাই হলো ইউরোপ৷ তাঁর মতে, প্রয়োজন পড়লে আইএমএফ'এর যে কোনো সদস্য দেশেরই সহায়তা পাওয়ার কথা৷ তারা যদি ইউরোপীয় ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়, সেক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম হতে পারে না৷ তাছাড়া সংকটের উৎস উত্তর অ্যামেরিকা, বলেন বারোসো৷ সেখানকার আর্থিক বাজারের সংকটই ইউরোপকে সংক্রমিত করেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল অবশ্য আলোচনায় কিছুটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছেন৷ তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সব মহাদেশকেই তার দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ ইউরোপ সেই কাজ করতে হবে৷
প্রশ্ন উঠছে, গোটা বিশ্ব কি ঐক্যবদ্ধভাবে ইউরোজোন সংকটের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত? নীতিগতভাবে সবাই প্রস্তুত, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কারণ ইউরো এলাকার সংকট আরও বাড়লে গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তবে সংকট মোকাবিলার পথ নিয়ে আগের মতো মতপার্থক্য রয়েই গেছে৷ ব্রিটেন ও অ্যামেরিকা যেমন আর্থিক বাজারের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ বা লেনদেনের উপর কর চাপানোর বিরোধিতা করে চলেছে৷ ইউরোপ এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে৷
এসবি / ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)