ইউরোপে হামলার হুমকি গাদ্দাফির, গোপন আলোচনা চলছে
২ জুলাই ২০১১আরও একবার গর্জে উঠেছেন লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি৷ শুক্রবার রাজধানী ত্রিপোলির গ্রিন স্কোয়্যারে প্রায় এক লক্ষ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে ও বেতারে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন গাদ্দাফি৷ সম্প্রতি গাদ্দাফির সমর্থনে এত বড় সমাবেশ দেখা যায় নি৷ তাঁর বাহিনীর উপর ন্যাটোর লাগাতার হামলার প্রতিশোধ নিতে তিনি ইউরোপে সরাসরি হামলা চালানোর হুমকি দেন৷ তিনি বলেন, ন্যাটো পিছু না হটলে বিপর্যয় ঘটে যাবে৷ ঔপনিবেশিক শক্তি লিবিয়ার পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডার দখল করতেই এই অভিযান চালাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ বিমান হামলা বন্ধ করে লিবিয়ার মানুষের সঙ্গে আলোচনার ডাক দেন তিনি৷ তবে ভাষণ শেষ হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পরেই গাদ্দাফির বাব-আল-আজিজিয়া ঘাঁটির কাছাকাছি কমপক্ষে ৩টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷ ন্যাটোর বিমান হামলার ফলেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া শহরের পূবের শহরতলিতেও হামলা চালিয়েছে ন্যাটো৷
বিদ্রোহীদের ব্যর্থতা
পাঁচ দিন আগে বিদ্রোহীরা ত্রিপোলির মাত্র ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে বর-আল-গানাম শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল৷ কিন্তু শুক্রবার গাদ্দাফি বাহিনীর হামলার মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ উল্লেখ্য, গাদ্দাফির বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বিদ্রোহীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সাফল্য ধরে রাখতে পারছে না৷ ফলে গোটা দেশের উপর গাদ্দাফির নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেওয়ার প্রচেষ্টাও পুরোপুরি সফল হচ্ছে না৷
গাদ্দাফি ও বিদ্রোহীদের মধ্যে আলোচনা
গাদ্দাফির মেয়ে আইশা এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর বাবা সংঘর্ষ থামাতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে চান৷ গাদ্দাফি নিজে অবশ্য বিদ্রোহীদের ‘দেশদ্রোহী' হিসেবে গালি দিয়ে আসছেন৷ লন্ডন ভিত্তিক এক আরবী সংবাদপত্র দাবি করেছে, টিউনিশিয়ায় গাদ্দাফি ও বিদ্রোহীদের মধ্যে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে৷ এমনকি গাদ্দাফি নাকি ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতেও প্রস্তুত৷ তাঁর শর্ত হলো, তাঁকে নিরাপদে সির্ত শহরে থাকতে দিতে হবে এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া চলবে না৷ আফ্রিকান ইউনিয়নও আবার দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতির উদ্যোগ নিচ্ছে৷
ন্যাটোর বিড়ম্বনা
সামরিক জোট ন্যাটোর মধ্যেও লিবিয়া অভিযান নিয়ে কিছু মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে৷ গাদ্দাফি এখনো ক্ষমতায় টিঁকে থাকার ফলে অভিযানের ব্যয়, প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের অভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ ফ্রান্স জানিয়েছে, নিরীহ মানুষের সুরক্ষার স্বার্থে বিদ্রোহীদের হাতে সরাসরি অস্ত্র তুলে দিচ্ছে৷ রাশিয়া এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এর ফলে লিবিয়ায় অস্ত্র সরবরাহের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হচ্ছে৷ ন্যাটোর অন্য কোনো সদস্য দেশও সরাসরি বিদ্রোহীদের সামরিক সাহায্য দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়