ইইউ ছেড়ে রাশিয়ার সঙ্গে
২২ নভেম্বর ২০১৩ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়া এতদূর এগিয়ে গেছে যে, খুব বেশি দেশ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নেই৷ সাবেক ইয়ুগোস্লাভিয়ার দেশগুলিও একে একে ইইউ-তে প্রবেশ করছে৷ বাকি দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে৷ এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ পোল্যান্ডের প্রতিবেশী ইউক্রেন৷ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র রাশিয়ার প্রভাবের বলয়ের মধ্যেও পড়ে৷ সে দেশের পূর্বাঞ্চলে রুশ বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস, রাশিয়ার সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে৷ অন্যদিকে দেশের পশ্চিমের মানুষ নিজেদের ইউরোপের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী৷ ফলে দেশের রাজনৈতিক শিবিরও এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত৷ সংসদ ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ইউরোপপন্থি ও মস্কোপন্থি রাজনীতিকদের অনুপাত অনুযায়ী দেশের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হয়৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়া ভালোই এগোচ্ছিল৷ প্রায় তিন বছরের প্রস্তুতির পর আগামী সপ্তাহে মুক্ত বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল৷ ইউক্রেনের সরকার আচমকা সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে৷ শুধু তাই নয়, তার বদলে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা৷ মস্কো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির সঙ্গে শুল্ক ইউনিয়নের যে উদ্যোগ নিচ্ছে, ইউক্রেনও তাতে শামিল হতে চায়৷ এমন সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সরকার বলেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তার খাতিরেই এমনটা স্থির করা হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ইইউ-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছিল৷ গত কয়েক সপ্তাহে মস্কো থেকে চাপ আরও বেড়ে গিয়েছিল৷ এই অবস্থায় জটিলতা কাটাতে ইউক্রেনের সরকার রাশিয়া ও ইইউ-র সঙ্গে এক ত্রিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল৷ তাতে অবশ্য ফল হয়নি৷
এমন অঘটনের কিছুটা ইঙ্গিত অবশ্য আগেই পাওয়া যাচ্ছিল৷ অসুস্থ কারাবন্দি বিরোধী নেত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কোকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল ইইউ৷ ইউক্রেনের সংসদে এই মর্মে মোট ছ'টি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল৷ কিন্তু তার কোনোটাই অনুমোদন পায়নি৷ অথচ এই বিষয়টিকেই সহযোগিতা চুক্তির পূর্বশর্ত হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইইউ৷
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানী কিয়েভে প্রতিবাদ দেখায় ইউরোপপন্থি মানুষ৷ বিরোধী নেতারা আগামী রবিবার একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন, যেখানে কমপক্ষে ১ লক্ষ মানুষ উপস্থিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা কর্মকর্তা ক্যাথরিন অ্যাশটন ইউক্রেনের এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, শুধু ইইউ নয় ইউক্রেনের মানুষের জন্যও এটা হতাশাজনক৷
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেল৷ ২০১৪ সালে ইউরোপীয় কমিশন নতুন করে সাজানো হবে৷ ২০১৫ সালে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ এই মুহূর্তে মস্কোপন্থি প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, বিরোধী ইউরোপপন্থি শিবির ক্ষমতায় এলে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ)