1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপের অর্থনীতি

২৫ মার্চ ২০১২

গ্রিস এযাত্রায় বেঁচে গেল৷ স্পেন ও ইটালির মতো দেশও বাজার থেকে সহজ শর্তে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ইউরোপের আর্থিক সংকট কেটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/14REr
ছবি: picture-alliance/dpa

অপেক্ষাকৃত শান্ত পরিবেশ

বহুকাল পর সত্যি এমন একটা সময় এসেছে, যখন ইউরোপীয় নেতাদের ঘর সামলাতে জরুরি ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে না৷ তা সত্ত্বেও পুঁজিবাজার কিন্তু মোটেই শান্ত নেই৷ রাজনৈতিক নেতারা স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু বাজারের চাহিদা একেবারে আলাদা৷ বাজার চায় আরও নগদ অর্থ, যাকে তারল্য বলা হয়৷ সেই চাহিদা মেটাতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহজ শর্তে অর্থ ঢেলে আসছে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এবার আশঙ্কা করছেন, এর ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ এই অর্থ যদি ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলির অর্থনীতি চাঙ্গা করতে লগ্নি করা হতো, তাহলে সবারই উপকার হতো৷ কিন্তু শোনা যাচ্ছে, এই সব দেশের ব্যাংকগুলি রাষ্ট্রীয় বন্ড কিনে সরকারকে ঋণ শোধ করতে সাহায্য করছে৷ তাছাড়া মনে রাখতে হবে, কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশিদিন ধরে বাজারে অর্থ ঢেলে যাবে না, ইউরোপীয় নেতারাও চিরকাল বাজারকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন না৷ অতএব সবাইকেই শেষ পর্যন্ত মুক্ত বাজার অর্থনীতির কাঠামোয় ফিরে যেতেই হবে – এটাই বাস্তব সত্য৷

Treffen der EU-Wirtschafts- und Finanzminister
চলছে আলোচনাছবি: dapd

বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা

সরকারি পর্যায়ে মোটামুটি একটা ঐকমত্য দেখা গেলেও প্রশ্ন উঠছে, পুঁজিবাজার, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কি এই সংকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে কি না৷ এই প্রসঙ্গে ২০০৮ ও ২০১১ সালের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা ও আচরণের বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷ প্রথম বার অ্যামেরিকায় গৃহঋণ সংকট, দ্বিতীয়বার ইউরোপের কিছু দেশে রাষ্ট্রীয় ঋণের সংকট আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিয়েছে৷ ভবিষ্যতে অস্বাভাবিক বাজেট ঘাটতি এড়াতে ইউরোপীয় নেতাদের একটা বড় অংশ কঠিন নিয়ম মেনে দিয়েছেন৷ তবে এই সংকটের জন্য পুঁজিবাজারও আংশিকভাবে দায়ী, বিশেষ করে যারা রাষ্ট্রীয় বন্ড কেনাবেচার সময় দায়িত্বশীল আচরণ করে নি, তারা৷ বেপরোয়া ঝুঁকি নিয়ে তারা ফাটকাবাজি করেছে৷ বাকিরা বাইরে বসে এই সব কাণ্ড দেখেও ঠিকমতো সতর্ক করে দেয় নি৷ ফলে সামান্যতম ঘটনা থেকেই বড় সংকটের জন্ম হয়েছে৷ বাজারে এবিষয়ে সচেতনতা জাগলে তবেই ভবিষ্যতে এমন সংকট এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

ইউরোপীয় কমিশনের উদ্যোগ

বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকলাপের উপর কড়া নজর ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণের পথে এগোচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন৷ মূল কাঠামোর মধ্যে ব্যাংক সহ যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের নিয়ে তেমন চিন্তা নেই৷ সমস্যা এমন সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যারা কাঠামোর বাইরে থেকে অসৎ বা অনৈতিক পথে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে৷ কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর৷ বিশেষ করে লন্ডন-ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ব্রাসেলস'এর চোখরাঙানি একেবারেই পছন্দ করে না৷ ইউরোপীয় কমিশনের অভ্যন্তরীণ বাজার সংক্রান্ত কমিশনার মিশেল বার্নিয়ে এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা ফান্ড'কে দোষ দিচ্ছি না, যারা এই সমান্তরাল কাঠামোয় সক্রিয় রয়েছে৷ আর্থিক উৎস খোঁজার ক্ষেত্রে আমরা যে বৈচিত্র্য খুঁজছি, সেক্ষেত্রে এই সব প্রতিষ্ঠান কাজে আসতে পারে৷ অর্থাৎ আমি এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মোটেই যুদ্ধ ঘোষণা করছি না৷ আমি শুধু চাই, বাকি যে কোনো ক্ষেত্রের মতো এটিও নিয়মাবলী ও স্বচ্ছতার আওতায় আসুক৷''

মোটকথা কমিশনার বার্নিয়ে চান, কোনো বাজার, সেই বাজারে সক্রিয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং কোনো আর্থিক পরিষেবাই যেন নিয়ন্ত্রণের আওতার বাইরে না থাকে৷ ‘শ্যাডো' বা ছায়া ব্যাংকগুলি গোটা বিশ্বে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আর্থিক লেনদেন করে থাকে বলে দাবি করছেন তিনি৷ ইউরোপে তাদের কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে৷ নজরদারি এড়াতে এরা নিত্যনতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে৷ জি টোয়েন্টি গোষ্ঠীর যৌথ সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এটা বলতে আমার কোনো সমস্যা নেই যে ‘শ্যাডো' ব্যাংকের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপ সবার আগে থাকতে চায়৷ তবে এর অর্থ এই নয় যে একা হয়ে পড়তে হবে৷''

দক্ষিণ ইউরোপের পরিস্থিতি

এই অবস্থায় গ্রিস, ইটালি ও স্পেনের মতো দেশ অবশ্য নিজেদের অনেকটা গুছিয়ে নিতে পেরেছে৷ বিশেষ করে ইটালিতে এক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ অতীতের ঢিলেঢালা মনোভাব ঝেড়ে ফেলে কোনো পক্ষই প্রধানমন্ত্রী মারিও মন্টি'র সংস্কার প্রক্রিয়ায় তেমন বাধা দিচ্ছে না৷ গ্রিসও অবশেষে ধাপ ধাপে শর্ত পূরণের চেষ্টা করে চলেছে৷ স্পেন মঙ্গলবার বন্ড বিক্রি করে রেকর্ড মাত্রার অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছে৷ এখন সবার আশা, এই ইতিবাচক প্রবণতা চলতে থাকবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য