ইউরোপীয় ইউনিয়নেও উইগুর ‘নির্যাতনের’ প্রযুক্তি
২৭ অক্টোবর ২০২০চীনের প্রতিষ্ঠান হিকভিশনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর মুসলমানদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়৷ এ কারণে উইগুর নির্যাতনে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে৷ অথচ নিজেদের ‘বিশ্বের প্রথম সারির ভিডিও নজরদারি পণ্য সরবরাহকারী’ হিসেবে দাবি করা হিকভিশন যে শুধু ইইউভুক্ত দেশগুলোতে চুটিয়ে ব্যবসা করছে তা-ই নয়, ইইউ-র দুটি প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে তাদের পণ্য৷
নেদারল্যান্ডসে অফিস খুলে দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপে নিজেদের ব্যবসা ছড়াচ্ছিল হিকভিশন৷ করোনা সংকট শুরুর পর থেকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইউরোপীয় কমিশনেও ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা৷ উন্নত প্রযুক্তির এই ক্যামেরা ছবি তোলার পাশাপাশি শরীরের তাপমাত্রাও মেপে নেয়৷ কেউ কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত কিনা তা বুঝতে শুরুতে শরীরের তাপমাত্রা মাপতেই হয়৷ এ কারণে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইউরোপীয় কমিশনেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই ক্যামেরা৷ কারো শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ৯৯ দশমিক ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে তাকে আর ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না৷
এর ফলে ইইউ-র গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়েছে৷ তবে পাশাপাশি বড় হয়ে উঠেছে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ছাড় দেয়া বা আপোষের বিষয়টি৷ প্রশ্ন উঠেছে, শান্তিতে নোবেল জয়ী ইইউ উইগুর নির্যাতনে ব্যবহৃত হিকভিশনের ক্যামেরা ব্যবহার করে কী করে?
যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকায়
২০১৯ সালে হিকভিশনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র নীতির জন্য হুমকি হতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা ‘এনটিটি লিস্টেও’ লেখা হয় তাদের নাম৷ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদন ছাড়া হিকভিশনের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারছে না৷
অভিযোগ অস্বীকার
হিকভিশন অবশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে ভূমিকার রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ ডয়চে ভেলেকে ই-মেলে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র দাবি করেন, ‘‘হিকভিশন মানবাধিকার সংক্রান্ত সব প্রতিবেদনকেই খুব গুরুত্ব দেয় এবং মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্বও স্বীকার করে৷ সারা বিশ্বে বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নানা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভুল বোঝাবুখি দূর করার কাজ করি আমরা৷’’ তবে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর নির্যাতনে তাদের পণ্য ব্যবারের অভিযোগ সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি৷
কঠোর কথা, নরম নীতি
মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ইইউ৷ উইগুর নির্যাতনেরও নিন্দা জানিয়ে এসেছে নিয়মিত৷ গত জুনে অনুষ্ঠিত ইউ-চীন সম্মেলনের সময়ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডেয়ার লাইয়েন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘‘মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়গুলো নিয়ে কোনো সমঝোতা হতে পারে না৷’’ অথচ ইউরোপীয় পার্লামেন্টেই চলছে হিকভিশনের ক্যামেরা৷
জার্মানির গ্রিন পার্টির রাজনীতিবিদ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট-এর সদস্য রাইনার্ড ব্যুটিকোফার মনে করেন হিকভিশনের সঙ্গে ইইউর এই সম্পৃক্ততা ‘লজ্জাজনক’৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আরেক সদস্য, বেলজিয়ামের রাজনীতিবিদ চার্লি ভাইমার্স মনে করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনে ভূমিকা রাখা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইইউর কোনো সম্পর্ক থাকা অনুচিত৷তার মতে, ‘‘নোবেল জয়ীদের আরো উঁচু মান বজায় রাখা উচিত৷’’
জেমস ফ্র্যানে/এসিবি
গত নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...