ইউরেনিয়াম মজুত বাড়ানোর প্রস্তাব ইরান সংসদে
৩ ডিসেম্বর ২০২০ইরানের পার্লামেন্ট নতুন আইনের প্রস্তাব পাঠালো প্রেসিডেন্টের কাছে। যেখানে বলা হয়েছে, দুই মাসের মধ্যে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে দেশে ইউরেনিয়ামের মজুত কয়েক গুণ বাড়ানো হবে। প্রেসিডেন্ট অবশ্য জানিয়েছেন, এখনই এ ধরনের আইন প্রণয়নের তিনি বিরোধী। এর ফলে কূটনৈতিক চাপ আরো বৃদ্ধি পাবে। তবে পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে নতুন আইন তৈরির পক্ষে। তাদের বক্তব্য, ইসরায়েল যে ভাবে চক্রান্ত করে দেশের পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যা করেছে, তার পর এমন আইনই বলবৎ করা উচিত।
পরমাণু পরীক্ষায় ইউরেনিয়াম সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ইউরেনিয়ামের পরিমাণ বাড়ানোর অর্থ পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা। ২০১৫ সালে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্থির হয়েছিল ইরান পরমাণু পরীক্ষার জন্য তিন দশমিক ছয় সাত শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করতে পারবে না। পার্লামেন্ট নতুন যে আইনের কথা বলেছে, তাতে ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত করার কথা বলা হয়েছে। যা রাখা হবে দেশের দুইটি পরমাণু কেন্দ্রে। যা থাকলে যে কোনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। আইনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘকেও পরমাণু কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। আইনে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে, দুই মাসের মধ্যে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
প্রেসিডেন্ট অবশ্য এখনই এমন আইনের বিপক্ষে। পার্লামেন্টের স্পিকার নতুন আইন তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি জানিয়েছেন, এখনই এমন আইন বলবৎ করলে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া আরো বিরূপ হতে পারে। ইরানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জটিল হতে পারে। ফলে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা দরকার। যদিও কিছু দিন আগেই পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যা নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, দ্রুত এর জবাব দেওয়া হবে।
ইরানের পরমাণু পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। ২০১৮ সালে অ্যামেরিকা নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় এবং ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপায়। ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, চুক্তিতে থেকেও ইরান পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে গোপনে। ইরান কখনোই তা মানতে চায়নি। কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন সেনার সঙ্গে ইরানের পরমাণু পরীক্ষাগারে আক্রমণ চালানোর বৈঠকও করেছিলেন ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত যা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘও জানিয়েছিল, একটি নতুন পরমাণু কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করেছে ইরান। সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়ামের চেয়ে বেশি মজুত করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। ইরান অবশ্য সেই সব অভিযোগই অস্বীকার করেছিল। তারপরেই পরমাণু বিজ্ঞানীর উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, বিবিসি)