ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিক হত্যা কি যুদ্ধাপরাধ?
৫ এপ্রিল ২০২২১৮৯৯ এবং ১৯০৭ এর হেগ সনদে, যা আসলে কিছু বহুপাক্ষিক চুক্তির সমন্বয়ে তৈরি, বেশ কিছু আইন এবং নিয়মের কথা বলা হয়েছে যেগুলো চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অবশ্যই মনে চলতে হবে৷
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির আট ধারায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে৷ ১৯৪৯ সালের জেনেভা সনদের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে৷
কিংস কলেজ লন্ডনের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক গবেষণা দলের উপপরিচালক মারিয়া ভারাকি বলেন, ‘‘যদিও রাজনীতিবিদ এবং পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে , কিন্তু এসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাইবাছাই এবং সত্যতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটা শুধুই অভিযোগ হিসেবে থাকবে৷’’
আইনজীবীরা যুদ্ধাপরাধকে জেনেভা সনদের চরম লঙ্ঘন মনে করেন৷ ভারাকি বলেন, ‘‘আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন, জোর করে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া এবং নির্বিচারে হামলার কথা বলছি৷ কারণ যুদ্ধসংক্রান্ত আইনের মৌলিক নীতি হচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করা যাবে না৷’’
এই বিচারে অবশ্য কিয়েভে বিদ্যালয় এবং প্রসূতি ওয়ার্ডে হামলা কিংবা মারিয়োপোলে থিয়েটারে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি৷ ভারাকি বলেন, ‘‘এবং গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা দেখেছি যে বেসামরিক পোশাক পরা মানুষের মরদেহ বুচার রাস্তায় পড়ে আছে৷ অনেককে মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ আন্তার্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ীয় এগুলো নৃশংসতা৷’’
তবে, যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞার কিছু অস্বচ্ছ দিক রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মূলত তিনটি নীতির উপর নির্ভরশীল: পার্থক্য, সমানুপাতিকতা এবং সতর্কতা৷ আর এই নীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে কোনো পক্ষই যাতে বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক স্থাপনায় হামলা না চালায়৷
যদিও কাগজে এই নিয়ম বেশ স্পষ্ট, কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তা নানাভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে৷ যেমন, যদি একটি বেসামরিক স্থাপনার ব্যবহার দেখে মনে হয় যে সেটি সামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন কী হবে?
ভারাকি বলেন, ‘‘আমি একটি শপিং মলের কথা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি৷ ইউক্রেনীয়রা বলছে এটা স্পষ্টভাবে একটি বেসামরিক স্থাপনা৷ কিন্তু রাশিয়া নিজেদের গোয়েন্দাদের বরাতে বলছে যে সেখানে সামরিক সামগ্রী জমা করা হয়েছিল৷’’
যদিও বেসামরিক মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য নিয়ম আছে, কিন্তু প্রায়শই সেগুলোর অপব্যবহার এবং হেরফের করা হয়৷
‘‘সবকিছুই নিয়মের ব্যাখ্যা এবং মানুষের বিবেচনার উপর নির্ভরশীল: কখন আপনি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করবেন, কী লক্ষ্যবস্তু বানাবেন, কিংবা সেটার পরিধি কতটা হবে,’’ বলেন ভারাকি৷
রব মাজ/এআই