ইউক্রেনে কবে শান্তি ফিরবে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত এক বছরে দুই পক্ষের হাজার হাজার সেনা মারা গেছে। ইউক্রেনের বেশ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনের বহু ছোট-বড় শহর ধ্বংস হয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এক বছর পরেও সংঘাত থামার চিহ্ন নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন চেয়েছিলেন, পুরো ইউক্রেন দখল করে নিতে। এখন ইউক্রেনের পাঁচভাগের একভাগ এলাকা তাদের দখলে আছে।
আর জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, রাশিয়াকে তাদের জমি থেকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা ইউক্রেনের আছে। এমনকী ক্রাইমিয়াও তারা রাশিয়ার দখলমুক্ত করবেন।
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন পুটিন। সেখানে আগ্রাসন বন্ধের কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি। তিনি ঘোষণা করেছেন, রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ হারাতে পারবে না। আর তিনি জানিয়েছেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য নিউ স্টার্ট চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসবেন না। বাইডেনের হঠাৎ ইউক্রেন সফরের প্রতিক্রিয়া এইভাবেই জানিয়েছেন পুটিন।
আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের ভয়
শান্তি আলোচনা শুরু করার পক্ষে চাপ বাড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলের রাজনীতিক ওয়াগেনকানেক্ট এবং নারীবাদী অ্যালিস সোয়ারজার প্রচার শুরু করেছেন, অবিলম্বে আলোচনা করতে হবে এবং অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের সাহায্যে ইউক্রেন কোনো ছোট লড়াইয়ে জিততে পারে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র যে দেশের হাতে আছে, তাদের হারাতে পারবে না। পাঁচ লাখ মানুষ তাদের আবেদনপত্রে সই করেছেন।
জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত একটি ওয়েবসাইটকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলির এই উদ্বেগ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। ইউক্রেন তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই আছে।
ইউক্রেন পুরো এলাকা উদ্ধার করতে চায়
ন্যাটোর জেনারেল সেক্রেটারি স্টলটেনবার্গ ডিডাব্লিউকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইউক্রেনের পক্ষে শান্তির জন্য একতরফা পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়। তাহলে স্বাধীন দেশ হিসাবে তারা আর থাকতে পারবে না।
তার মত ছিল, ইউক্রেনের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্যই পশ্চিমা দেশকে অস্ত্রসাহায্য করে যেতে হবে। জার্মানির লিওপার্ড ২ কামান যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে।
ইউক্রেনের আশা, এই অত্যাধুনিক কামান তাদের রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার কাজে সাহায্য করবে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিকো ল্যাঙ্গে বলেছেন, ইউক্রেন যে আবার তাদের পুরো জমি উদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবসম্মত। রাশিয়ার সেনার উপর চাপ পড়লে তারা আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হবে।
ক্রাইমিয়া নিয়ে
ল্যাঙ্গে মনে করছেন, রাশিয়া বিপক্ষকে মানসিকভাবে চাপে রাখতেই পরমাণু অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শান্তি আলোচনা শুরু করা ও সফল হওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ক্রাইমিয়া দখল করতে হবে। তাহলে রাশিয়া চাপে পড়ে যাবে। পুটিনেরও মুখ পুড়বে।
কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার হেলমুট গ্যানসের মনে করেন, যদি ইউক্রেনের ট্যাংক ক্রাইমিয়ার দিকে যায়, তাহলে পুটিন যুদ্ধক্ষেত্রকে প্রসারিত করে দেবেন। তিনি তখন ইউক্রেনের প্রতিবেশী কিছু দেশকে আক্রমণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইউরোপ আরো বিপাকে পড়ে যাবে।
কী করলে রাশিয়া আলোচনায় বসবে?
এই বিষয়ে নানা ধরনের মত আছে। একটা মত হলো, রাশিয়ার উপর সামরিক চাপ বজায় রাখতে হবে। তাহলেই তারা আলোচনায় বসবে।
জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস বলে দিয়েছেন, জার্মানি কোনোভাবেই যুদ্ধের মধ্যে ঢুকবে না। সেকারণেই ট্যাংক পাঠাতে দেরি করেছে জার্মানি। আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে, সেনা পাঠালেই যুদ্ধে অংশ নেয়া বোঝায়। যেটা জার্মানি কোনোভাবেই করতে চায় না।
ইউক্রেনের সমর্থক দেশগুলির মধ্যে কয়েকটি দেশের মত হলো, ইউক্রেনকেও শান্তির জন্য এগোতে হবে। নাহলে কখনই শান্তি আসবে না।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জোহানেস ভারউিক মনে করেন, ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তাহলেই রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্রাইমিয়া থেকেও রাশিয়া সরে আসতে পারে।
চীনের ভূমিকা
মিউনিখ সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠকে চীন জানিয়েচে, তারা শীঘ্রই একটা শান্তিপ্রস্তাব দিচ্ছে। তবে তাতে কী তাকবে তা তারা জানায়নি।
তবে পশ্চিমা দেশগুলি এই প্রস্তাব নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। চীনের প্রস্তাব মেনে যুদ্ধ থামবে বলে তারা মনে করছেন না।
ক্রিস্টোফ হ্যাসেলবাখ/জিএইচ/ডিডাব্লিউ