ইইউ-র নিষেধাজ্ঞায় কেন বিপাকে পড়লো না রাশিয়া?
২২ মার্চ ২০২৩২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। ইউক্রেন আক্রমণ করলো রাশিয়া। তারপর থেকে ইইউ অন্তত দশবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়া থেকে আমদানি ও রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে তেল আসছে না। তেল, গ্যাস ও পেট্রো পদার্থের দামের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০২২ সালে রাশিয়ার অর্থনীতির উপর যতটা চাপ আসবে বলা হয়েছিল, তা হয়নি।
ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেছেন, ''রাশিয়ার উপর ইইউ যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করলো, তখন তেলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কারণ, তখন ভয় ছিল, এই কাজ করলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। তার চাপ সামলাতে গিয়ে বিপাকে পড়বে দেশগুলি।''
ডিডাব্লিউকে লিখিতভাবে ব্রুকস জানিয়েছেন, ''এর মানে এই নয় যে, নিষেধাজ্ঞা কাজ করেনি। কিন্তু এটাও ঘটনা, তেল বিক্রি করে রাশিয়ার হাতে প্রচুর অর্থ জমা হয়েছে। ''
ব্রাসেলসের থিংক ট্যাংক ব্রুগেলসের মারিয়া ডেমের্টজিস বলেছেন, ''এখন তাই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার উপরে জোর দেয়া হচ্ছে।''
ইইউ থকে রাশিয়ায়
ইইউ-র দেশগুলি থেকে রাশিয়ায় জিনিস পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ইইউ-র জিনিস রাশিয়ার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয় ফোব্রুয়ারিতে একটি পেপার প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইইউ থেকে জিনিস তৃতীয় কোনো দেশে যাচ্ছে। সেখান থেকে জিনিসগুলি রাশিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। জার্মানির অর্থমন্ত্রী এই পেপার প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উচ্চ প্রযুক্তির জিনিস রাশিয়ার সামরিকক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
ইইউ-র বর্তমান নিষেধাজ্ঞা অনুসারে, রাশিয়াকে কোনো প্রযুক্তি হস্তান্তর করা যাবে না। সেমি কন্ডাকটর, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল জিনিস রাশিয়ায় পঠানো যায় না। ড্রোন, এনক্রিপশন টুলসও সেখানো পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
তৃতীয় দেশের মাধ্যমে
কোনো সরকারি নথি নেই, তবু সন্দেহ আছে। মারিয়া বলেছেন, যে সব দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি, তাদের উপরই সন্দেহ গিয়ে পড়ছে। তার মতে, এক্ষেত্রে দুইটি প্রধান দেশ হলো চীন ও তুরস্ক।
ইউরোপীয় ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভলাপমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাভোরসিক এই তালিকায় আরো তিনটি দেশের নাম যোগ করেছেন। কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান ও আর্মেনিয়া। অনলাইন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ''যদি ইইউ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানির বিষয়টি দেখা হয়, তাহলে তা ৬০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু একইসঙ্গে কিরঘিজস্তান, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়ায় রপ্তানি অনেকটা বেড়েছে। এই দেশগুলি বেলারুশ ও রাশিয়ার সঙ্গে একসঙ্গে ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিনে আছে। তাই একবার এই সব দেশে কোনো জিনিস পৌঁছে গেলে, তার উপর আর নজর রাখা সম্ভব নয়। যে জিনিসগুলি সরাসরি রাশিয়া যেত, তা এখন এই সব দেশের মাধ্যমে যাচ্ছে।''
ইইউ-র সদস্য দেশগুলি এবং ইউ কমিশন এখন এই বিষয়গুলি দেখছে। জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা ইইউ কমিশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। জার্মানি তার বাণিজ্যিক সহযোগী দেশগুলির উপর কড়া নজর রাখছে। দেখা হচ্ছে, এখান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো জিনিস রাশিয়ায় যাচ্ছে কি না।
এছাড়াও কড়া ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। তারাও এখন সম্ভবত তা বন্ধ করেছে। ইইউ ও অ্যামেরিকা যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা আরো কড়াভাবে রূপায়ণ করা হবে।
ইইউ-র তরফে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে তুরস্ক ও আমিরাতে। তাদের সঙ্গে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ফলে চাপ বাড়ানো হচ্ছে।
লুসিয়া শুলটেন/জিএইচ/ডিডাব্লিউ