ইইউর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বাইরে গ্রিস
২০ আগস্ট ২০১৮‘‘এবারের গ্রীষ্মটা একটু অদ্ভূত'', বলছিলেন গ্রিসের পূর্ব উপকূলের মারাথন শহরের সৈকতের এক পানশালার মালিক পলিক্সেনি কোতসানতনি৷ তিনি বলেন, ‘‘জুনে প্রচণ্ড বৃষ্টি, জুলাইয়ের পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড৷ তবুও মনে হচ্ছে, এবার অনেক বেশি পর্যটক এসেছেন, তাঁরা পয়সাও খরচ করছেন বেশি৷''
ঋণ সংকটের আগে পর্যটকরা যেমন নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করতেন, সে পরিবেশ এখনো ফেরত আসেনি বটে, কিন্তু ‘সম্প্রতি তাঁদের বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই অবকাশ যাপন করতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন কোতসানতনি৷
২৫ বছর ধরে এই পানশালা চালাচ্ছেন কোতসানতনি ও তাঁর স্বামী৷ তাঁদের বেশিরভাগ গ্রাহকই গ্রিক, কিন্তু সম্প্রতি রুশ এবং ফরাসি পর্যটকরাও মারাথনে আসতে শুরু করেছেন৷ যখন ব্যস্ততা বেড়ে যায়, কোতসানতনির তিন মেয়েও যোগ দেন মায়ের সহায়তায়৷
কিন্তু অতিরিক্ত কাউকে নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবতেও পারেন না কোতসানতনি৷ তিনি বলছেন, ‘‘খরচ কমাতেই হবে, বিশেষ করে সংকটের সময়৷ খরচ কমাও, ধৈর্য বাড়াও, এটাই আমার নীতি৷''
এই নীতি এখন পুরো গ্রিসের ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পারে৷ সোমবার থেকে গ্রিসকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে ইউরোজোনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে৷ এথেন্স এবং ব্রাসেলসের রাজনীতিবিদরা একমত হয়েছেন, ঋণ সংকট এখন কেটে গেছে৷
কিন্তু কোতসানতনির মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মনে করেন না আসলেই গ্রিসের সংকট কেটেছে৷ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেশটির পর্যটন খাত৷ গ্রিক অর্থনীতির এক শতাংশের জোগান দেয় পর্যটন৷ কিন্তু নানা ধরনের করের ধাক্কা লেগেছে এই খাতে৷ কোতসানতনির অভিযোগ, ‘‘শুধু ২৪ শতাংশ ভ্যাটই দিতে হয় আমাদের৷ দীর্ঘদিন ধরে এ বোঝা সহ্য করা কঠিন৷''
কমছে পেনশন
গ্রিসের পেনশনভোগীরা আছেন বেশ বিপদে৷ অবসর ভাতায় নেমে এসেছে কাটছাঁটের খাঁড়া৷
এথেন্সের অবসরপ্রাপ্ত ডেন্টিস্ট মেরি সোনি কাজ করেছেন ৩৫ বছর৷ তাঁর নিজের প্র্যাক্টিস তো ছিলই, পাশাপাশি কাজ করেছেন দেশের বৃহত্তম স্বাস্থ্যবিমার সাথেও৷ অবসরে যাওয়ার পর শুরুতে মাসে এক হাজার ইউরো পেলেও ঋণ সংকট শুরুর পর তা প্রায় অর্ধেক করে ফেলা হয়েছে৷
২০১৯ সাল থেকে আরো অনেক কিছুতে কাটছাঁট শুরু হতে পারে৷ বার্ষিক করমুক্ত সীমা এরই মধ্যে কমিয়ে ফেলা হয়েছে৷ তবে সোনির অবশ্য এ অবস্থা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি৷ আমার দুই সন্তানই কাজ করছে, তাঁরা নিজেদের পরিবারও চালাতে পারছে৷''
সোনির মতো ভাগ্য অনেকেরই হয়নি৷ নিজেদের ছেঁটে ফেলা অবসর ভাতা থেকেও অনেককে নিজের বেকার সন্তান তো বটেই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাতি-নাতনীদেরও খরচ চালাতে হয়৷
অশীতিপর এই নারী মনে করেন, একসময় গ্রিস সবকিছু সামলে উঠবে এবং সামাজিক সেবাগুলো সঠিকভাবে আবার সবার কাছে পৌঁছে দেবে৷ সোনি জানান, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা সময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করে এসেছে৷ কিন্তু তিনি মনে করেন, ‘‘সামাজিক নীতি কখনো দাক্ষিণ্যের ওপর চলতে পারে না, রাষ্ট্রকেই নিতে হবে এর দায়িত্ব৷''
হতাশা, না প্রত্যাশা?
গ্রিসের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ঋণ সংকট শুরুর পর ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির অর্থনীতি স্পষ্টতই চাঙা হতে শুরু করে৷ ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি আরো দুই শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের৷ বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ৷
বেশ কিছু বছর ধরেই সরকারের বাজেটে প্রাথমিক উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে৷ এর অর্থ, কোষাগার থেকে খরচের চেয়ে বেশি অর্থ আয় হয়েছে৷ কিন্তু এতে অবশ্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সুদের হিসেব রাখা হয়নি৷ গ্রিক অর্থমন্ত্রী ইউক্লিড সাকালোটোস ২০০২ সাল থেকে এই উদ্বৃত্ত ৫ দশমিক ২ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন৷ জুন মাসে দেশটিকে দেয়া ঋণ মওকুফের প্রধান শর্তই ছিল এটি৷
অবশ্য ভয়ের ব্যাপারও রয়েই যাচ্ছে৷ মুদ্রার অপর পাশটাতেই রয়েছে খরচ কমানোর আরো কিছু ভাবনা৷ ২০১০ সালে সংস্কার শুরু হলেও এখনো অর্থনৈতিক লাভের তুলনায় গ্রিসের ঋণের বোঝা প্রায় দ্বিগুণ৷
গ্রিসের সামনে এখন প্রশ্ন একটাই – সকল বাধা কাটিয়ে উঠে চাঙা হবে অর্থনীতি, নাকি আবারো পড়বে মুখ থুবড়ে৷
ইয়ামিস পাপাদিমিতেরিও/এডিকে