1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বাইরে গ্রিস

২০ আগস্ট ২০১৮

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা জালের বাইরে থেকেই এখন থেকে নিজেদের সামলাতে হবে গ্রিসকে৷ আট বছরের অর্থনৈতিক সহায়তার পর মন্দা কাটিয়ে ওঠার আশা দেশটির৷

https://p.dw.com/p/33QCD
Griechenland Santorini  Touristen schauen sich den Sonnenaufgang an
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tzortzinis

‘‘এবারের গ্রীষ্মটা একটু অদ্ভূত'', বলছিলেন গ্রিসের পূর্ব উপকূলের মারাথন শহরের সৈকতের এক পানশালার মালিক পলিক্সেনি কোতসানতনি৷ তিনি বলেন, ‘‘জুনে প্রচণ্ড বৃষ্টি, জুলাইয়ের পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড৷ তবুও মনে হচ্ছে, এবার অনেক বেশি পর্যটক এসেছেন, তাঁরা পয়সাও খরচ করছেন বেশি৷''

ঋণ সংকটের আগে পর্যটকরা যেমন নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করতেন, সে পরিবেশ এখনো ফেরত আসেনি বটে, কিন্তু ‘সম্প্রতি তাঁদের বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই অবকাশ যাপন করতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন কোতসানতনি৷

২৫ বছর ধরে এই পানশালা চালাচ্ছেন কোতসানতনি ও তাঁর স্বামী৷ তাঁদের বেশিরভাগ গ্রাহকই গ্রিক, কিন্তু সম্প্রতি রুশ এবং ফরাসি পর্যটকরাও মারাথনে আসতে শুরু করেছেন৷ যখন ব্যস্ততা বেড়ে যায়, কোতসানতনির তিন মেয়েও যোগ দেন মায়ের সহায়তায়৷

কিন্তু অতিরিক্ত কাউকে নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবতেও পারেন না কোতসানতনি৷ তিনি বলছেন, ‘‘খরচ কমাতেই হবে, বিশেষ করে সংকটের সময়৷ খরচ কমাও, ধৈর্য বাড়াও, এটাই আমার নীতি৷''

এই নীতি এখন পুরো গ্রিসের ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পারে৷ সোমবার থেকে গ্রিসকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে ইউরোজোনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে৷ এথেন্স এবং ব্রাসেলসের রাজনীতিবিদরা একমত হয়েছেন, ঋণ সংকট এখন কেটে গেছে৷

কিন্তু কোতসানতনির মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মনে করেন না আসলেই গ্রিসের সংকট কেটেছে৷ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেশটির পর্যটন খাত৷ গ্রিক অর্থনীতির এক শতাংশের জোগান দেয় পর্যটন৷ কিন্তু নানা ধরনের করের ধাক্কা লেগেছে এই খাতে৷ কোতসানতনির অভিযোগ, ‘‘শুধু ২৪ শতাংশ ভ্যাটই দিতে হয় আমাদের৷ দীর্ঘদিন ধরে এ বোঝা সহ্য করা কঠিন৷''

কমছে পেনশন

Griechenland nach dem Rettungsprogramm
মারাথন শহরের সৈকতের এক পানশালার মালিক পলিক্সেনি কোতসানতনিছবি: DW/G. Papadimitriou

গ্রিসের পেনশনভোগীরা আছেন বেশ বিপদে৷ অবসর ভাতায় নেমে এসেছে কাটছাঁটের খাঁড়া৷

এথেন্সের অবসরপ্রাপ্ত ডেন্টিস্ট মেরি সোনি কাজ করেছেন ৩৫ বছর৷ তাঁর নিজের প্র্যাক্টিস তো ছিলই, পাশাপাশি কাজ করেছেন দেশের বৃহত্তম স্বাস্থ্যবিমার সাথেও৷ অবসরে যাওয়ার পর শুরুতে মাসে এক হাজার ইউরো পেলেও ঋণ সংকট শুরুর পর তা প্রায় অর্ধেক করে ফেলা হয়েছে৷

২০১৯ সাল থেকে আরো অনেক কিছুতে কাটছাঁট শুরু হতে পারে৷ বার্ষিক করমুক্ত সীমা এরই মধ্যে কমিয়ে ফেলা হয়েছে৷ তবে সোনির অবশ্য এ অবস্থা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি৷ আমার দুই সন্তানই কাজ করছে, তাঁরা নিজেদের পরিবারও চালাতে পারছে৷''

সোনির মতো ভাগ্য অনেকেরই হয়নি৷ নিজেদের ছেঁটে ফেলা অবসর ভাতা থেকেও অনেককে নিজের বেকার সন্তান তো বটেই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাতি-নাতনীদেরও খরচ চালাতে হয়৷

অশীতিপর এই নারী মনে করেন, একসময় গ্রিস সবকিছু সামলে উঠবে এবং সামাজিক সেবাগুলো সঠিকভাবে আবার সবার কাছে পৌঁছে দেবে৷ সোনি জানান, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা সময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করে এসেছে৷ কিন্তু তিনি মনে করেন, ‘‘সামাজিক নীতি কখনো দাক্ষিণ্যের ওপর চলতে পারে না, রাষ্ট্রকেই নিতে হবে এর দায়িত্ব৷'' 

Is Greece's economic crisis really over?

হতাশা, না প্রত্যাশা?

গ্রিসের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ঋণ সংকট শুরুর পর ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির অর্থনীতি স্পষ্টতই চাঙা হতে শুরু করে৷ ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি আরো দুই শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের৷ বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ৷

বেশ কিছু বছর ধরেই সরকারের বাজেটে প্রাথমিক উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে৷ এর অর্থ, কোষাগার থেকে খরচের চেয়ে বেশি অর্থ আয় হয়েছে৷ কিন্তু এতে অবশ্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সুদের হিসেব রাখা হয়নি৷ গ্রিক অর্থমন্ত্রী ইউক্লিড সাকালোটোস ২০০২ সাল থেকে এই উদ্বৃত্ত ৫ দশমিক ২ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন৷ জুন মাসে দেশটিকে দেয়া ঋণ মওকুফের প্রধান শর্তই ছিল এটি৷

অবশ্য ভয়ের ব্যাপারও রয়েই যাচ্ছে৷ মুদ্রার অপর পাশটাতেই রয়েছে খরচ কমানোর আরো কিছু ভাবনা৷ ২০১০ সালে সংস্কার শুরু হলেও এখনো অর্থনৈতিক লাভের তুলনায় গ্রিসের ঋণের বোঝা প্রায় দ্বিগুণ৷

গ্রিসের সামনে এখন প্রশ্ন একটাই – সকল বাধা কাটিয়ে উঠে চাঙা হবে অর্থনীতি, নাকি আবারো পড়বে মুখ থুবড়ে৷

ইয়ামিস পাপাদিমিতেরিও/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান