আয়ু জানাবে জিন
২ জুলাই ২০১০পৃথিবীর আলো-হাওয়া কেউ একশ বছর দেখে যেতে পারবে কি না, মোটামুটিভাবে আগাম বলে দিতে পারবেন তাঁরা৷ প্রত্যেক মানুষের জিনই বলে দেবে এই উত্তর৷
আয়ু নির্ধারক জিনের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করেছেন অ্যামেরিকার বোস্টন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা৷ তাদের বহু প্রতীক্ষিত প্রতিবেদন আজই প্রকাশিত হলো বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স জার্নাল' এ৷ এই জিন কীভাবে কাজ করে, তা দেখতে ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ১ হাজার ৫৫ ব্যক্তির জিন বিশ্লেষন করেন গবেষকরা৷ পরবর্তী সময়ে জন্ম নেওয়া ১২শ ৬৭ জনের জেনোমের সঙ্গে তাদের জেনোমের একটি তুলনা করা হয়৷ তাতে দেখা যায়, শতায়ুদের সবার জিনগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সমরূপতা আছে৷
বয়সজনিত রোগের জন্য যে জিন দায়ী, তার কার্যকারিতাও কমিয়ে দেয় আয়ু নির্ধারক জিন৷ গবেষক দলের অন্যতম পুরোধা ড. টমাস পার্ল বলছেন, ‘‘এখন যদি কেউ বলেন, বয়স হলেই রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে৷ তা নিয়ে কে বাঁচতে চাইবে৷ আমি বলবো, এটা সত্যি নয়৷ শতায়ুদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আয়ু নির্ধারক জিন কার্যকর থাকলে রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা কমে যায়৷''
১৯৯৫ সালে এই গবেষণা শুরু হয়ে শেষ হলো কেবল৷ প্রথমবারে শুধু ককেশীয়দের ওপরই চালানো হয় এই গবেষণা৷ এরপর মঙ্গোলয়েডদের ওপর বিশেষ করে জাপানিদের নিয়ে এই গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ কারণ জাপানেও শতবর্ষী লোকের সংখ্যা অনেক৷ মজার ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্রে শতায়ু মানুষের অধিকাংশই নারী৷ এর হার ৮৫ শতাংশ, বাকি ১৫ শতাংশ পুরুষ৷ এই বিষয়ে গবেষক দলের অন্যতম প্রধান ড. পলা সেবাস্টিয়ানি বলেন, ‘‘এতে বোঝা যায়, বার্ধক্যে রোগ প্রতিরোধে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি সক্ষম৷''
তবে ধূমপান, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান আর অতিভোজন করে জিনের কল্যাণে শতায়ু হওয়ার আশা যদি কেউ করে থাকেন, তবে তাকে হতাশ হতে হবে৷ গবেষকরা বলছেন, জীবনযাপন পদ্ধতি অনেক কিছুই ঠিক করে দেয়৷ তাঁরা বলছেন, যাদের কোনো বদভ্যাস নেই, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তারা বাঁচেন বেশিদিন৷
আয়ু জেনে নেওয়ার যে পদ্ধতিটি গবেষক দল বের করেছেন, তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে চান না তাঁরা৷ সেবাস্টিয়ানি বলেন, আমরা তা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো৷ যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷ নিজের জেনটিক কোড যাদের জানা আছে, তারা সাইটে গিয়ে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে জেনে নিতে পারবেন তাদের সম্ভাব্য আয়ু৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক