আহা সবাই যদি পাঁচ বছরের মেয়েটির মতো ভাবত!
১২ অক্টোবর ২০১৬এজন্য সে তার জন্মদিনের কেকের এক টুকরো তার বাবার কাছে বিক্রি করেছে৷ এছাড়া যেখান থেকেই সে ও তার ছোট বোন টাকা পাচ্ছে তা জমাচ্ছে৷ ব্রুকের মা জানিয়েছেন এসব তথ্য৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে'র প্রতি ব্রুকের অনুরোধের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে৷ ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে হৈচৈ হওয়ায় তার সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি৷
কেন ঘটনাটি বললাম হয়ত অনেকে বুঝতে পারছেন৷ বাচ্চা মেয়েটি গৃহহীনদের দুরবস্থা দেখে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, তাদের পক্ষে হয়ত আগামী বড়দিন উদযাপন সম্ভব হবে না৷ তাই সে তাদের উপহার দেয়ার পরিকল্পনা করেছে৷ সবাই মিলে সে উৎসবটি পালন করতে চায়৷
এরকমইতো হওয়া উচিত৷ তাই না? উৎসব তো সবার জন্যই৷ আমার টাকা আছে তাই আমি ভালো জিনিস কিনবো, ভালো খাবার খাবো; আর গরিবদের সেই সামর্থ্য নেই তাই তারা উৎসব করতে পারবে না, তা তো ঠিক নয়৷
ঈদের কথাই ধরুন৷ ঈদ এলেই আমরা সবাই কার, কত সম্পদ আছে তা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, এবং সেটি করতে গিয়ে পারলে অনেক সময় সামর্থ্যের উপরে উঠে অনেক কিছু করার চেষ্টা করি৷
কিন্তু ইসলাম বলে অন্য কথা৷ আনন্দের সময়টুকু যেন সবাই একসঙ্গে উপভোগ করতে পারে, সেজন্য সামর্থ্যবানদের ‘ফিতরা' দিতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া আছে যাকাতের বিধান, যা অনেকেই দেন না৷ আবার অনেকে আছেন, যতটুকু যাকাত দেয়ার কথা ততটুকু দেন না৷ অথচ ঠিকই ছেলেমেয়েকে প্রতি ঈদে দু-তিনটি করে জামাকাপড় কিনে দেন, যা হয়ত তাদের প্রয়োজনও নেই৷ কারণ সারা বছরই তো তারা পোশাক পেয়ে থাকে৷ তারপরও ঈদ এলেই শিশু-কিশোরদের মধ্যে পোশাক কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়৷ বন্ধুদের মধ্যে কে বেশি জামা পেলো তা নিয়ে আলোচনা হয়৷ অথচ এই শিশু-কিশোরদের যদি বোঝানো যায় যে, নিজের জন্য একটি অতিরিক্ত পোশাক না কিনে ঐ টাকা দিয়ে গরিব এক শিশুকে নতুন পোশাক কিনে দেয়াতেই বেশি আনন্দ, তাহলে হয়ত তারা পরবর্তীতে সেটিই করবে৷ ছেলেমেয়েকে বোঝানোর এই দায়িত্বটি মা-বাবাকেই নিতে হবে৷
আর মা-বাবাকেও প্রতিবছর ঠিকমতো যাকাত দিতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে একটু পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে৷ যাকাতের পুরো টাকা কয়েকজনের মধ্যে ভাগ করে না দিয়ে একেক বছর একেকজনকে সেটি দেয়া যেতে পারে৷ এতে করে গরিব ঐ লোকটি পুরো টাকা দিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার মতো কিছু একটা করতে পারবে৷ ফলে পরবর্তীতে হয়ত দেখা যাবে ঐ গরিব লোকটিই অন্য কাউকে যাকাত দেয়ার মতো সামর্থ্যবান হয়ে উঠছে৷
ইদানিং দেখি ধনি ব্যক্তিদের অনেকে যাকাত দেয়ার নামে বিভিন্ন ‘লোক দেখানো' কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷ শহরময় মাইকিং করে গরিব লোকদের নিজের বাড়ির সামনে জড়ো করে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি দিচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে তিনি পুরো শহরকেই যেন নিজের ‘উদারতা'র কথা জানাতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন৷
‘লোক দেখানো'র এই বিষয়টি চোখে পড়ে কোরবানির ঈদের সময়ও৷ কে, কার চেয়ে বড় কোরবানির পশু কিনলেন সেটি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে৷ অথচ আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত ছিল, কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করেও পশু কোরবানি দেয়া যায়, সেটি৷ কেননা কোরবানির পর অনেকেই পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য ঠিকভাবে পরিষ্কার করেন না৷ এতে করে আশেপাশের পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে উঠে৷ এছাড়া জমে থাকা রক্ত রোগজীবাণুর বংশবিস্তারে সহায়তা করে৷
তাই সবাই যেন পরিবেশসম্মত উপায়ে কোরবানি দেন তা নিয়ে নিজ নিজ সমাজে আলোচনা করতে হবে৷ এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ সরকারকেও গত বছর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে৷ ঢাকায় পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থান ঠিক করে দেয়া হয়েছিল৷ সবাইকে সেখানে পশু নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল৷ তবে তথ্যটি নগরবাসীর অনেকে জানতেন না বলে উদ্যোগটি ততটা ফলপ্রসূ হয়নি৷ এছাড়া নির্দিষ্ট স্থানটি বাসা থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সেখানে অনেকে কোরবানির পশু নিয়ে যাননি বলে শোনা গেছে৷ এ বছরও ১১টি সিটি করপোরেশনে ২,৯৪৩টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার৷
সরকারের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়৷ এটি যেন সফল হয় সে ব্যাপারে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে৷ এক্ষেত্রে সবাই যেন কোরবানির পশু নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় তা আইন করে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে৷ সব নাগরিককে তাদের কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানটি কোথায় তা সময়মতো জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ আর সারা দেশে এরকম স্থান নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে৷ সরকারের এই পদক্ষেপ পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত নাগরিকদের পশু কোরবানির পর সেই স্থান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে৷ এক্ষেত্রে ছোটবেলায় শোনা সেই কথা - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ - সবাই মেনে চললেই যথেষ্ট৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷