আলৎসহাইমার মোকাবিলায় চা
১৮ জুলাই ২০১৭মলিকিউলার বায়োলজিস্ট এরিশ ভাংকার প্রতিদিন বড় এক কাপ সবুজ চা খেতে বড় ভালবাসেন৷ বছর দশেক আগে তিনি এই অভ্যাস করেছেন৷ তখনই তিনি এক বিশেষ অণু নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন, যার নাম ইজিসিজি৷ গ্রিন টি-র মধ্যে সেটা পাওয়া যায়৷ ভাংকার বলেন, ‘‘এক পরীক্ষার সিরিজ থেকে কাকতালীয়ভাবে বিষয়টি চোখে পড়ে৷ আমরা গ্রিন টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলাম না৷ নেহাতই আচমকা আমরা তাতে গ্রিন টি-র উপকরণ ইজিসিজি নামের পদার্থের সন্ধান পাই৷''
কয়েক হাজার প্রাকৃতিক পদার্থ পরীক্ষার পর গ্রিন টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেল৷ সে সময়ে এরিশ ভাংকার আলৎসহাইমারের মতো রোগ নিয়ে গবেষণা করছিলেন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কে প্রোটিন ভুলভাবে ভাঁজ করা থাকলে এই রোগ হতে পারে৷ তাঁদের ধারণা, এমন প্রোটিন জটলা পাকিয়ে অ্যাগ্রিগেট সৃষ্টি করে নিউরনের ক্ষতি করতে পারে৷ ভুল করে সৃষ্টি হলেও সেই প্রোটিন অ্যাগ্রিগেট শরীরের উপর খারাপ প্রভাব রাখতে পারে৷ তাদের কাঠামো কিন্তু বেশ মজবুত৷ ভাংকার সেগুলি নিউট্রাল করার পথ খুঁজছিলেন৷ তিনি গ্রিন টি-র এজিসিজি দিয়ে সেগুলি ভরিয়ে দিয়েছিলেন৷
এজিসিজি শুধু অস্বাভাবিক প্রোটিন অণুর জটলা খুলে দিল না, সেগুলি ভেঙে দিতে শুরু করলো৷ তাহলে কি আলৎসহাইমার রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্রিন টি একটা ভিত্তি হতে পারে? এরিশ ভাংকার বলেন, ‘‘আমার মনে সংশয় ছিল৷ এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হলেও সেগুলির মান তেমন ভালো নয়৷ অবশ্যই এসোটেরিক লেখাও আছে, যা একজন বিজ্ঞানীর জন্য অত্যন্ত ভীতিকর৷''
বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও ভাংকার এই গবেষণা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন৷ একটি টেস্ট টিউবে পরীক্ষার পর তিনি প্রাথমিক ফলাফল পেলেন৷ সেই ফলাফল কি জীবন্ত কোষেও দেখা যেতে পারে? একটি মিশ্রণে জীবন্ত প্রাণীর কোষ ও ভুল ভাঁজ করা প্রোটিন রয়েছে৷ প্রোটিন ‘ডাই' করা হয়েছে৷ অর্থাৎ গ্রিন টি কোনো পরিবর্তন আনলেই তা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে৷ ইজিসিজি যোগ করা হলো৷ গবেষকরা ২৪ ঘণ্টার জন্য সেই মিশ্রণ রেখে দেবেন৷ তারপর তাঁরা প্রোটিনের মধ্যে পরিবর্তন হলো কিনা, তা খতিয়ে দেখবেন৷
তুলনার খাতিরে গবেষকরা প্রথমে ইজিসিজি যোগ করার ঠিক পরেই একটি নমুনা দেখছেন৷ তাঁরা সরাসরি কোষের মধ্যে উঁকি মারছেন৷ কোষের নিউক্লিয়াই নীল রঙের৷ ভুল করে ভাঁজ করা প্রোটিন হলো লাল বিন্দু৷ গ্রিন টি কাজ করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা কমে যাবে৷ ২৪ ঘণ্টা পর কোষগুলি কেমন দেখতে হবে? ফলাফল খুবই ভালো৷ লাল বিন্দুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে৷ এরিশ ভাংকার বলেন, ‘‘ইজিসিজি এক অসাধারণ অণু, তাদের প্রভাবও অসাধারণ৷ দেখতে পাচ্ছি, আলৎসহাইমার রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ ভাঁজ করা প্রোটিন কীভাবে ভেঙে যাচ্ছে৷ ''
এখনো পর্যন্ত এমন ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোনো অণু পাওয়া যায়নি৷ এরিশ ভাংকার এখন ইজিসিজি-র মতো সমান প্রভাবশালী অণু তৈরি করার আশা করছেন৷ সেগুলি আরও ছোট ও আরও স্থিতিশীল হবে৷ সামান্য এক চায়ের গাছে তৈরি কম্পাউন্ডের উপর ভিত্তি করে নতুন সুপার-মলিকিউল হবে সেটি৷
বিরগিট টাটার/এসবি