1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোচনায় শুরুতে নির্বাচন, শেষেও নির্বাচন

ডয়চে ভেলের অতিথি লেখক মাসুদ কামাল৷
মাসুদ কামাল
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

২০২৪-এর শুরুতে এবং শেষে একটা আলোচনা কমন ছিল। সেটা হচ্ছে ‘নির্বাচন’।

https://p.dw.com/p/4od4h
Bangladesch | Parlamentswahlen
ছবি: Mortuza Rashed/DW

জানুয়ারি মাসে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে মানুষ, এবং এই ডিসেম্বরেও মানুষের উচ্চারিত ও অনুচ্চারিত আলোচিত প্রসঙ্গ হচ্ছে—নির্বাচন।

২০২৪ সালের শুরুতে ‘নির্বাচন' পেয়েছিল এই দেশের জনগণ। একটা অভূতপূর্ব জাতীয় নির্বাচন। এমন নির্বাচন কেবল এই দেশেই নয়, পুরো দুনিয়াতে আগে কখনো হয়েছিল কিনা সন্দেহ। ‘আমি আর ডামি'র নির্বাচন। প্রতিটি আসনেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। কোনো কোনো আসনে এরকম একই দলের একাধিক প্রার্থী এর আগেও হয়ত থাকতো, তবে সেটা অলিখিতভাবে। অনেকটা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে। দলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার কারণে অনেক সময় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারও করে দেওয়া হতো। কিন্তু এবার তেমন কিছু তো হয়-ই নাই, উলটো দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া ব্যক্তিদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়ার জন্য। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন উৎসাহ দিয়েছেন! বিএনপিসহ সকল স্বীকৃত

বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন করায়, নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী হয়েছে—এটা দেখাতে, নেওয়া হয়েছিল এই অভিনব পদ্ধতি। ফলে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছিল, ব্যালট পেপারে হয়ত প্রার্থী হিসাবে ছয় জন বা সাত জনের নাম দেখা গেছে, কিন্তু এরা সবাই আওয়ামী লীগের। ফলে একজন ভোটার ওই ব্যালট পেপারের যেখানেই ভোট দিন না কেন, সেটা যাবে আওয়ামী লীগের কাছেই।

আমি ও ডামি'র এমন অভিনব নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ, তার শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা, এবং তাঁর অনুগত চামচা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি-নেতারা ভেবেছিল—যাক পাঁচ বছরের জন্য নিশ্চিত হওয়া গেল। এই সময় জুড়ে ক্ষমতায় থাকবে তারা, রাজত্ব করবে, লুটপাট করবে। কেউ কিছু বলতে পারবে না। বললেও শোনা হবে না। এমন স্বপ্ন যে একেবারে ভিত্তিহীন ছিল, তা-ও নয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচনের পর তো তারা এভাবেই রাজ করেছে। তাহলে আরও একবারই বা নয় কেন?

সুখময় এই স্বপ্ন মাত্র ছয় মাসের মাথাতেই পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। পা কাটলো পচা শামুকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিপুতিদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে কি থাকবে না, থাকলে কত শতাংশ থাকবে—এই বিতর্কে ধরা খেয়ে গেল সরকার। মজার বিষয় হলো, এটা কিন্তু একটা মীমাংসিত বিষয় ছিল। ২০১৮ সালে ঠিক এই ইস্যুটা নিয়েই একটা আন্দোলন হয়েছিল। ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলনে বিরক্ত হয়ে, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা তখন সকল কোটাই বাতিল করে দিয়েছিলেন। ছাত্রদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তখন গুরুত্ব পায়নি, গুরুত্ব পায়নি কী হওয়া উচিত আর উচিত নয়—সে বিষয়ও, শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়ে অনেকটা হুজুগের বশে বাতিল করে দিয়েছেন পুরো কোটা ব্যবস্থাই। এটাও কিন্তু ছিল একটা অনিয়ম। এর মাধ্যমে বরং প্রকাশিত হয়েছে, দেশ কোনো নিয়মে চলে না, কোনো যুক্তিতে চলে না, চলে এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা, রাগ, অনুরাগ বা বিরাগের ভিত্তিতে।

Masood Kamal - Journalist
মাসুদ কামাল, সাংবাদিকছবি: Sazzad Hossain

যা হোক, ২০১৮ থেকে কোটামুক্ত পদ্ধতি চলছিল। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু পোষ্য প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গেল। আদালত কোটা বাতিলের ওই সরকারি সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করলো। ফলে আবার মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের ৩০ শতাংশ কোটা বহালের ব্যবস্থা হলো। আবার নতুন করে শুরু হলো ছাত্রদের আন্দোলন। এই আন্দোলন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু মন্তব্য ছাত্রদের বিক্ষোভকে সর্বব্যাপী করে তুললো। পুরো ১৫ বছর ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন যেন ছাত্রদের এই আন্দোলনের সঙ্গে মিলে গেল। প্রবল চাপে মাত্র ৩৬ দিনের মাথায় হাসিনা সরকারের পতন হলো। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা পালিয়ে গেলেন দেশ ছেড়ে। কেউ কেউ পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। দেশে গঠিত হলো ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের হাত থেকে এই দেশের জনগণ যে এক সময় মুক্তি পেতে পারে- এই বিশ্বাসই একসময় মানুষ করতে ভুলে গিয়েছিল। অথচ সেটাই ঘটলো। বলা যায়, কেবল এই ২০২৪ সালের জন্যই নয়, পুরো দেড় দশক সময়কালের জন্যই এই দেশে এটি ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেন ৫ আগস্ট, আর ড. ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিলেন ৮ আগস্ট। মাঝে তিন দিন দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। নামে ‘অন্তর্বর্তীকালীন' হলেও কার্যত ড. ইউনূসের সরকার আসলে একটা গণঅভ্যুত্থানের ফসল। কিন্তু সমস্যাটি হলো, ড. ইউনূস সরকারের কেবিনেটে যারা জায়গা পেলেন তাদের ৮০ শতাংশেরই এই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সম্পর্ক ছিল বলে এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। এদেরকে নির্বাচন করা হয়েছে মূলত ব্যক্তিগত পরিচয় বা সম্পর্কের ভিত্তিতে। আরো একটা বিষয় লক্ষণীয়, সেটা হচ্ছে এই উপদেষ্টাদের অধিকাংশেরই বয়স ৭০ এর বেশি।

হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল মূলত দুটি। এক. একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটা রাজনৈতিক সরকার গঠিত হবে। আর দুই. শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এমন কিছু সংস্কার করা যাতে আগামীতে ভোটের মাধ্যমে যে সরকারই আসুক, তারা যেন স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। এমন কিছু সংস্কার করতে হবে, যেন সংবিধান বা আইনগুলোই একজন শাসককে স্বৈরাচারী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আর এসবের পাশাপাশি অনুচ্চারিত আরও একটা প্রত্যাশা ছিল—ওই নির্বাচন করতে যতদিন সময় লাগবে, ততদিন এই সরকার দেশটাকে ভালোভাবে পরিচালনা করবে। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদাগুলো মিটাবে। মানুষ ভেবেছিল, তৃতীয় এই চাহিদাটি বুঝি সহজেই মিটে যাবে।

দৈনন্দিন চাহিদা বলতে—দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাস্তানি, অরাজকতা, দুর্নীতি, এসব। আসলে দেশে যখন আইনের শাসন না থাকে, তখনই এসব ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিশেষ করে বাজারদর যে আগে প্রায়ই মানুষের কষ্টের কারণ হতো, তার পিছনে মূল কারণগুলো কী ছিল? মূল কারণ ছিল চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট। কিন্তু দলীয় সম্পৃক্ততার কারণে চাঁদাবাজ ও বাজার সিন্ডিকেটের কাছে সরকার ছিল অসহায়। মানুষ ভেবেছিল, ড. ইউনূসের সরকার এলে নিশ্চয়ই এরা চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দেবে না। ফলে জিনিসপত্রের দাম বুঝি আপনাআপনিই কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হলো না। মানুষের আশাভঙ্গ হলো। দেখা গেল এই সরকার নিজেরা হয়ত চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দিচ্ছে না, কিন্তু বিপরীত দিকে তাদেরকে দমনও করতে পারছে না। কীভাবে তাদেরকে দমন করতে হয়, শাস্তির আওতায় আনতে হয়, সে বিষয়টিই বুঝতে পারছে না। সিন্ডিকেটকে থামাবে কি, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটই সরকারকে নতজানু হতে বাধ্য করছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা সম্ভবত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারা। আন্দোলন চলাকালে আগের স্বৈরাচারী সরকার পুলিশ বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি করে দিয়েছিল। ফলে ওই সময়ে ছাত্র-জনতা যেমন মারা গেছে, তেমনি পুলিশও মারা গেছে অনেক। নতুন সরকার এসে এইসব মৃত্যুর বিষয়ে একই রকম আচরণ করছে না। হয়ত এটাই স্বাভাবিক, কারণ, পুলিশ তখন ছিল পরাজিত স্বৈরাচারের পক্ষে। অন্যদের কাছে এটাকে স্বাভাবিক মনে হলেও খোদ পুলিশের কাছে স্বাভাবিক মনে না-ও হতে পারে। যত পুলিশ মারা গেছে, সেসবের বিচারের ক্ষেত্রেও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতার ঘোষণা এসেছে। ফলে পুলিশকে মোটিভেট করা যাচ্ছে না। থানায় পুলিশ যারা আছে, তাদের মধ্যে প্রত্যাশিত সক্রিয়তা ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ‘মব জাস্টিস'। যাকে তাকে ধরে ‘স্বৈরাচারের দোসর' ট্যাগ লাগিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হচ্ছে ঢালাও মামলা, হত্যা মামলা। সাধারণ নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, অথবা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আসামির তালিকা থেকে নাম কাটানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

ভয়ংকর আরেকটা বিষয় খুব লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত'র নামে দেখা যাচ্ছে ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন ন্যারেটিভে ব্যাখ্যার প্রচেষ্টা। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় কেউ কেউ নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরের প্রভাবের কথা বলেছিলেন। সেই সব সন্দেহ যে অমূলক ছিল না, তার নমুনাও এখন দেখা যাচ্ছে। আগে যেমন ‘রাজাকার' একটা গালি ছিল, এখন সেই জায়গাটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা' দিয়ে প্রতিস্থাপনের একটা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাস্তাঘাটে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করার ঘটনাও ঘটছে!

ঝামেলা হচ্ছে কূটনীতিতেও। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী হচ্ছে ভারত। সেই ভারতের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন প্রায় হিমাঙ্কের কাছাকাছি। এর পিছনের ভারতের দায়ই বেশি বলে আমার ধারণা। তাদের অতি অনুগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যেতে বাধ্য হওয়ায়, তাদের মন খারাপ হতেই পারে। তার প্রতিফলনও তাদের আচরণে থাকতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে. আমরা কী করছি? আমরা কী সম্পর্কটিকে উন্নত করার ক্ষেত্রে তেমন লক্ষণীয় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি? চেষ্টা কি করছি?

লেখার শুরুতে বলেছিলাম, বছরের শেষ পর্যায়ে এসেও ‘নির্বাচন'ই এখন মানুষের মনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। সরকার বা তাদের সমর্থক ছাত্র সমন্বয়করা যদিও তারস্বরে বারবার সংস্কারের কথা বলছেন, কিন্তু সেটা হালে তেমন একটা পানি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। সংস্কারের জন্য যে সকল কমিশন গঠন করা হয়েছে, যে সকল ব্যক্তিকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে, তাদের যোগ্যতা ও কর্মকাণ্ড দেখার পর সংস্কারকে এখন অনেকের কাছে নিছক সময়ক্ষেপণ বলেই বিবেচিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমন্বয়কদের কারো কারো আচরণের বাড়াবাড়ি ও উল্টাপাল্টা কথাবার্তা। তাদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা বোধকরি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। সেজন্যই হয়ত তারা কিছুটা সময় নিতে চায়, যাতে এর মধ্যে নতুন এই দলের জন্য মাঠটি গুছিয়ে নিতে পারে। এসবের বিপরীতে দেখা যাচ্ছে দ্রুত নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর

চাপ। শুরুতে এই চাপ আসছিল প্রধানত বিএনপি'র পক্ষ থেকে, কিন্তু এরই মধ্যে জামায়াতের অনেক নেতার কণ্ঠেও দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠেছে। সাধারণ মানুষও এখন যেন দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রা নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। কমে যাচ্ছে তাদের ধৈর্য। এমনিতে গত তিন দশকের অভিজ্ঞতার আলোকে রাজনৈতিক সরকারের উপরে জনগণের আস্থা অনেকটাই কম। তারপরও বর্তমান অনিশ্চিত ও নাজুক পরিস্থিতি আবার তাদেরকে নির্বাচন নিয়ে ভাবতেই বাধ্য করছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান