আমিরাতের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন বন্দি বিনিময়
৪ জানুয়ারি ২০২৪প্রায় দুই বছর আগে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার তেমন উদাহরণ দেখা যায় নি৷ তুরস্কের মধ্যস্থতায় কিছু সময়ের জন্য কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে খাদ্যশস্য রপ্তানি এবং মাঝেমধ্যে ছোট আকারে যুদ্ধবন্দি বিনিময় ঘটেছে৷ এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় বুধবার ইউক্রেন ও রাশিয়া আবার বন্দি বিনিময়ের ঘোষণা করেছে৷ গত প্রায় পাঁচ মাসের বিরতির পর দুই পক্ষই দুইশোরও বেশি বন্দি বিনিময় করেছে৷ তবে কোনো পক্ষই এখনো আটক যুদ্ধবন্দিদের মোট সংখ্যা প্রকাশ করে নি৷
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন রুশ সামরিক বাহিনীর ২৪৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেন ২৩০ জনকে ফেরত পেয়েছে, যাদের মধ্যে ২২৪ জন সৈন্য ও চার জন বেসামরিক মানুষ আছেন৷ যুদ্ধের সূচনার পর থেকে এক ধাক্কায় এত বেশি সংখ্যক বন্দি বিনিময় ঘটে নি বলে এখনো পর্যন্ত জানা গেছে৷ কিয়েভ ও মস্কো আলাদা ভিডিওতে বন্দিদের প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য প্রকাশ করেছে৷
আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্যই সে দেশ বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করতে পেরেছে৷ আমিরাত দুই পক্ষের উদ্দেশ্যে আরো মানবিক উদ্যোগ ও যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্রের প্রস্তাব দিয়েছে৷ ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এইচইউআর-এর প্রধান কুরিলো বুদানভ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরাসরি ভূমিকা স্বীকার করে বলেন, অনেককাল পর কঠিন বন্দি বিনিময় সম্ভব হলো৷ প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি দিনটিকে ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে বন্দি বিনিময়ের আরো উদ্যোগের অঙ্গীকার করেন৷ রাতের ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, যত বেশি সংখ্যক রুশ নাগরিককে আটক করা যাবে, বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনা ততই কার্যকর হবে৷
যুদ্ধবন্দি বিনিময় সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে৷ ইউক্রেনের পূর্বে আভদিভকা শহরে রাশিয়া গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বুধবার সেখানে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘটেছে বলে স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন৷ রাশিয়ার বেড়ে চলা হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে সহায়তা চালু রাখার আবেদন জানিয়েছেন৷ তবে মার্কিন কংগ্রেসে রাজনৈতিক বিবাদের কারণে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত বিশাল সহায়তা আটকে থাকায় তিনি অসহায় বোধ করছেন৷ নিজে ওয়াশিংটন সফর করেও জেলেনস্কি সেই বিবাদের জট ছাড়াতে পারেন নি৷
মার্কিন সামরিক সহায়তা দ্রুত চালু না হলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ বিশেষ করে আকাশপথে রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করতে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের গোলাবারুদ কমে আসায় ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষার ক্ষমতা কমে যেতে পারে৷ এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানী কিয়েভ শহরে আরো কয়েকটি শক্তিশালী হামলা প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট গোলাবারুদ অবশিষ্ট রয়েছে৷ সের্গেই নাইয়েভ নামের ওই কমান্ডারের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নতুন করে সরবরাহ শুরু না হলে সেই রক্ষাকবচ অচল হয়ে পড়বে৷ রাশিয়া ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকেজো করার জন্য জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)