আমিরাতিরা তাদের জাতীয় সত্তা সংরক্ষণে উৎসুক
১২ অক্টোবর ২০১৪ইউএই-র ৮৫ লাখ বাসিন্দার মাত্র ১১ শতাংশ আসলে আমিরাতি৷ এদের সত্তার ভিত্তি হলো তাদের ‘ট্রাইব' বা সম্প্রদায় এবং সেই সংক্রান্ত প্রথা ও রীতিনীতি৷ এই সম্প্রদায়গুলি ছিল বেদুইন উপজাতির অঙ্গ, কাজেই তাদের আদত জীবনধারা ভবঘুরে বেদুইনদের জীবনধারার অনুরূপ৷ আমিরাতের পুরুষরা পায়ের গোড়ালি অবধি ঢাকা সাদা কান্দুরা পরেন, মহিলারা পরেন ঢিলেঢালা কালো আবাইয়া৷ এই পোশাক এবং সেই সঙ্গে সমৃদ্ধির স্পষ্ট চিহ্ন – এই দুই দেখে আমিরাতের আদি বাসিন্দাদের বহিরাগতদের থেকে আলাদা করা যায়৷
শারজা-র সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার বিভাগের পরিচালক আবদুলআজিজ আল-মুসল্লম বলেন: ‘‘আমরা যদি নানা ধরনের মানুষদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংঘাতের জন্য প্রস্তুত না থাকি, তাহলে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব৷ বিপুল সংখ্যক অ-আমিরাতিদের উপস্থিতি আমাদের নিজেদের সত্তা বজায় রাখতে বাধ্য করেছে৷'' বলতে কি, ইউএই-তে পশ্চিমি বেশভূষায় সজ্জিত পশ্চিমি মহিলাদেরও কোনো কমতি নেই৷ সে বিচারে আমিরাতের মানুষজনের কোনো সংকীর্ণতা নেই – দুবাইয়ের নামি-দামি শপিং মলগুলোয় পশ্চিমি মহিলাদের পাশেই আবাইয়া পরিহিত আমিরাতি মহিলাদের দেখতে পাওয়া যাবে৷
আমিরাতিদের কাছে ট্রাইবাল অ্যাফিলিয়েশন বা সাম্প্রদায়িক সত্তা হলো তাদের সামাজিক পরিচিতির ভিত্তিপ্রস্তর৷ লেখক ও বুদ্ধিজীবী সঈদ হামদান বলেন: ‘‘আমাদের সমাজের প্রকৃতি হলো সম্প্রদায় ভিত্তিক৷ মরুভূমি, উপকূল এবং পর্তাঞ্চলের আলাদা-আলাদা ট্রাইব বা সম্প্রদায় আছে৷'' এক্ষেত্রে আল-মুসল্লম কয়েকটি বৃহৎ বহিরাগত সম্প্রদায় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সাংস্কৃতিক সত্তা বজায় রাখার গুরুত্বের কথা বলেন৷ বৃহৎ বহিরাগত সম্প্রদায় বলতে তিনি দৃশ্যত একদিকে এশিয়ার দেশগুলি থেকে আগত শ্রমিক, অন্যদিকে পশ্চিমা অতিথি ও কর্মচারীদের কথা বলছেন৷
আমিরাতে যে সব বিদেশি কাজ করেন, তাঁদের নিজেদের স্কুল, উপাসনামন্দির ইত্যাদি আছে৷ কিন্তু বহু দশক আমিরাতে কাটানোর পরেও নাগরিকত্ব পাওয়া তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ বিবাহের ক্ষেত্রেও আমিরাতের পুরুষরা আমিরাতি মহিলাদেরই বিবাহ করেন – যদিও কিছু কিছু পুরুষ বিদেশিনীদের দ্বিতীয় পত্নী হিসেবে রাখেন, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
আমিরাতিদের সামাজিক মেলামেশার ভিত্তি হল স্বকীয় বাসভবনে ‘মজলিস', যা কিনা একটি বেদুইন প্রথা৷ নয়ত আমিরাতিরা গন্ধ মাখতে ভালোবাসেন, নামকরা পশ্চিমি ডিজাইনার লেবেল লাগানো কান্দুরা ইত্যাদি পরেন – নয়ত অভিবাসন এবং নতুন প্রযুক্তির দ্বিবিধ চাপে পড়া জাতীয় সত্তাকে বিগত ৪০ বছরের মতো আগামীতেও বজায় রাখার চেষ্টা করে যান৷
এসি/ডিজি (এএফপি)