‘আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বপ্ন নিয়ে’
৬ অক্টোবর ২০১১মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন উনসত্তরের গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন৷ সেসময় কারাভোগও করতে হয়েছিল এই ছাত্রনেতাকে৷ একাত্তরে তিনি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ তাঁকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়৷ স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন শাহাবুদ্দিন৷ পঁচিশে মার্চের আগে ফিরে যান নিজের এলাকায়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে৷ শুরু করেন মুক্তিসংগ্রাম৷ এই বীর যোদ্ধা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২৫ মার্চ রাতেই আমরা আমাদের এলাকার একটি সেতু ভাঙার চেষ্টা করি৷ তখন কুমিল্লা থেকে কিছু সেনা চট্টগ্রামের দিকে আসতে শুরু করেছিল৷ আমরা চেষ্টা করছিলাম সেতুটি ভেঙে তাদের গতিরোধ করতে৷''
সেনা প্রশিক্ষণ
শাহাবুদ্দিনরা সত্তরে কিছু সেনা প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন৷ ডামি বন্দুক ব্যবহার করে নেওয়া সেই প্রশিক্ষণ কাজে লেগেছিল একাত্তরে৷ তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না৷ তাই, কিছুদিন যুদ্ধের পর গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাড়ি জমান শাহাবুদ্দিন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে রামগড়, সেখান থেকে আমরা চলে যাই হরিনা৷ এরপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় দেরাদুন তান্দুয়ায়৷ সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে মে মাসে আমরা আবার মিরসরাই ফিরে আসি৷''
সম্মুখ যুদ্ধ
শাহাবুদ্দিন মিরসরাই এলাকায় একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন৷ চেষ্টা করেছেন পাকসেনাদেরকে রুখতে৷ তবে, এই কাজে সবসময় সাফল্য আসেনি৷ বিশেষ করে পাকিস্তান বাহিনীর ভারি অস্ত্রশস্ত্রের সামনে কখনো কখনো অসহায় হয়ে পরতেন গেরিলারা৷ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘আগস্টের শেষের দিকে আমরা সুফিয়া রোডে এমব্যুশ করি৷ যখন মিলিশিয়া বাহিনী এগিয়ে আসে, তখন আমরা তাদেরকে গুলি করে৷ দুই মিলিশিয়া প্রাণ হারায়৷ কিন্তু কয়েকঘণ্টা লড়াইয়ের পর পাকসেনাদের ভারি গোলাবর্ষণের কারণে আমরা পিছু হটতে বাধ্য হই৷''
অস্ত্র ফেরত
এভাবে নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হল৷ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শাহাবুদ্দিন অস্ত্র ফেরত দিয়ে ফিরে গেলেন শিক্ষাঙ্গনে৷ শাহাবুদ্দিনের কথায়, ‘‘বাহাত্তর এর দশ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে আসলেন৷ তিনি দায়িত্ব নিলেন৷ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বললেন অস্ত্র জমা দিয়ে, যার যার কাজে ফিরে যেতে৷ আমরা তাই করলাম''৷
হতাশ শাহাবুদ্দিন
বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহাবুদ্দিন৷ এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তিনি৷ জানালেন, যেই আশা নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ৪০ বছর আগে, সেই আশা এখনো পূর্ণ হয়নি৷ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বপ্ন নিয়ে৷ আমরা একটি সোনার দেশ পাবো৷ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ব৷ একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে৷ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে৷ এজন্যই আমরা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম৷ আজকে আমি বলব, আমরা যে আশা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, সেটা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷''
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ