1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবু ত্ব-হার খোঁজে সরকারি দপ্তরে ঘুরছেন তার স্ত্রী

১৬ জুন ২০২১

আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের খোঁজে থানা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদর দপ্তর সব জায়গাতেই ঘুরছেন তার স্ত্রী৷ কোথাও তিনি আশা পেয়েছেন, কোথাও পাত্তাই পাননি৷

https://p.dw.com/p/3v0eY
মাদ্রাসার মূল উদ্যোক্তা ইসলামী বক্তা হিসেবে পরিচিত আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানছবি: bdnews24

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তথ্য অনুযায়ী আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের বাসাটির নীচতলার দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে একটি বালিকা মাদ্রাসার কার্যক্রম চলছে৷ মাদ্রাসার মূল উদ্যোক্তা ইসলামী বক্তা হিসেবে পরিচিত আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান প্রায় আটদিন ধরে তিন সঙ্গীসহ নিখোঁজ রয়েছেন৷

স্বামীর খোঁজে স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদর দপ্তর সব জায়গাতেই ঘুরেছেন বলে জানালেন বিডিনিউজকে আদনানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার৷ কোথাও তিনি আশা পেয়েছেন, কোথাও পাত্তাই পাননি৷

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাবিকুন্নাহার যে চিঠিটি জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি লিখেছেন, গত ৮ জুন রংপুর থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো গ ৩৩-৪৩৪২) ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন আদনান ৷ তার সঙ্গে ছিলেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন ফয়েজ৷ গাড়িটিসহ চারজনেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ সাবিকুন্নাহার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ বলছে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে, কেউ বলছেন তাকে পাওয়া গেছে ৷ এসব নানা গুজবের মধ্যে তিনি স্বামীকে ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

আদনানের পারিবারিক বাড়ি রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায় ৷ তবে তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন ৷ আদনানের মা আজেদা বেগম শুক্রবার (১১ জুন) বিকালে ছেলের সন্ধান চেয়ে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছেন ৷

খেলোয়াড় থেকে ইসলামী বক্তা

রপুরের এক সময়কার ক্রিকেট খেলোয়াড় আফসানুল আদনান ত্ব-হা পড়াশোনা করেছেন কারমাইকেল কলেজে ৷ মা আজেদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দর্শনে স্নাতকোত্তর করে বাড়ির পাশে আল জামেয়া আসসালাফিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছেন আদনান৷

আদনানের ফেইসবুকে পেইজের অনুসারীর সংখ্যা ৫২ হাজার৷ সাবিকুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন বলেন, "ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে আলেমদের একটি পক্ষের সঙ্গে তার মতবিরোধ তৈরি হয়৷ এসব কারণে তিনি পরিচিত আলেমদের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি৷ বরং সাধারণ মানুষ ও অনুসারীরা আদনানকে ফিরে পেতে অনলাইনে অনেক বেশি সোচ্চার ৷''

যেভাবে নিখোঁজ

সাবিকুন্নাহার জানান, রংপুরের বাড়ি থেকে বগুড়ায় একটি ধর্মীয় সভায় যোগ দিতে বিকেল ৪টার দিকে একটা কারে করে বের হন আদনান৷ গাড়িটির মালিক রংপুরের আমির উদ্দীন, তিনিই চালান৷ রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফোনে আদনান জানান, দুটি মোটরসাইকেলে চারজন তার গাড়িটিকে অনুসরণ করছে ৷ পরে ‘হয়তো ভয়ে বা উদ্বিগ্ন হয়ে' তিনি বগুড়ার সভায় যোগ না দিয়ে ঢাকার পথ ধরেন৷ তার সঙ্গে আব্দুল মুহিত ও মোহাম্মদ ফিরোজ নামে যে দুজন ছিলেন তারা আদনানকে বগুড়ার সভায় নিতে এসেছিলেন৷ পরে পরিস্থিতি বুঝে তারা আদনানকে ঢাকা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ রাত আড়াইটার দিকে তার গাড়ি গাবতলী পৌঁছেছে বলে স্ত্রীকে জানান আদনান ৷ এরপর থেকেই আর কোন যোগাযোগ নেই৷

আদনানের প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূরও বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে তার ফোন বন্ধ পান তিনি৷"রাত ২টা ৩৬ মিনিটে আদনানের সাথে আমার শেষ কথা হয় ৷ তিনি তখন বলেছেন কাছাকাছি চলে আসছেন৷''

গাবতলীতে পৌঁছানোর বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার বলেন, সাধারণত আদনান বাড়ির বাইরে গেলে তিনি (স্ত্রী) ফোন করে অবস্থান জানতে চান ৷ আদনান গুগল ম্যাপ থেকে নিজের অবস্থান (লোকেশন) বের করে তার একটা স্ক্রিনশট নিয়ে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন ৷ সর্বশেষ তিনি গাবতলীর লোকেশন পাঠান ৷

কারা আদনানকে ধরে নিতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আদনান বক্তব্যে যেসব কথা বলতেন, তা অনেক সময়ই সরকারের বিপক্ষে যেত৷ এসব নিয়ে নিজের একাধিক বক্তব্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদনান৷''

রাতে ফেইসবুক লাইভে এসে সাবিকুন্নাহার বলেন, কোনো অপহরণকারী টাকার জন্য এটা করেছে এমনটা তিনি মনে করছেন না ৷

সন্দেহজনক কল, হোয়াটসঅ্যাপ খোলা

লাইভে সাবিকুন্নাহার বলেন, আদনান নিখোঁজের পর তার কাছে দুটি সন্দেহজন কল এসেছিল৷ একটা অপরিচিত নম্বর থেকে বলা হয়েছিল, আদনানকে ছাড়াতে টাকা লাগবে৷ এরপর আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি৷

আর অনেকদিন ধরেই বন্ধ আবু ত্ব-হা আদনানের একটি পুরনো নম্বর থেকেও ফোন করে একজন পুরুষ কয়েকবার জানতে চান, ‘আপনি কী আদনানের স্ত্রী ৷' সাবিকুন্নাহার তার পরিচয় জানতে চাইলে ফোনটি কেটে দেওয়া হয় ৷ তবে আদনানের হোয়াটসঅ্যাপ মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য অনলাইন থেকে আবারও অফলাইন হয়ে যাচ্ছে৷ মঙ্গলবার রংপুরের পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন সাবিকুন্নাহারকে দুবার ফোন করে আবু ত্বহার কোনো খবর পাওয়া গেছে কিনা তা জানতে চান এবং খবর পেলে যেন পুলিশকে জানান৷

স্বামীর পাঠানো গাবতলীর লোকেশন ম্যাপ হাতে সাবিকুন্নাহার রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গেলে পুলিশ তার মামলা বা জিডি নেয়নি৷

এ বিষেয়ে দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহাম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদনান কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন সে বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আদনানের স্ত্রী অভিযোগ গ্রহণ করা যায়নি৷

অ্যামনেস্টির উদ্বেগ

আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানসহ চারজন নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ আদনানকে খুঁজে পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন অনেকে৷

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়ার ফেসবুক পেইজে গত সোমবার বলা হয়, ওই চারজনের অবস্থান জানতে কর্তৃপক্ষের উচিত তাৎক্ষণিক সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনা করা৷ আর তারা যদি রাষ্ট্রের হেফাজতে থেকে থাকে তবে এখনই তাদের মুক্তি দিতে হবে৷

গত বছরের ২৮ আগস্ট ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব দ্যা ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স' উপলক্ষে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১২টি সংগঠনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৭২ জনকে নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ৷এদের কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, কারও লাশ পাওয়া গেছে, কেউ কথিত ‘ক্রসফায়ারে' নিহত হয়েছেন, কারও খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি৷

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য