আফগান-তালেবান শান্তি বৈঠক ফের বিশ বাঁও জলে
১৮ আগস্ট ২০২০ফের থমকে গেল আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে তালেবান নেতৃত্বের শান্তি বৈঠক। আফগানিস্তান প্রশাসন সোমবার জানিয়ে দিল, আপাতত তারা তালেবান বন্দিদের মুক্তি দেবে না। তালেবানও জানিয়ে দিল, বন্দিদের ছাড়া না হলে শান্তি বৈঠকের প্রশ্ন নেই। ফলে এই সপ্তাহের শেষের দিকে দুই শিবিরের বৈঠক আপাতত ভেস্তে গেল।
কেন বৈঠক হচ্ছে না
ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যামেরিকা এবং আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তি হয়েছিল তালেবানের। সেখানে স্থির হয়েছিল, আফগান সরকার পাঁচ হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেবে। তালেবানও এক হাজার আফগান সেনাকে মুক্তি দেবে। এর পর বহু মাস কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার তালেবানকে মুক্তি দিয়েছে আফগান প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে ঈদের আগেই তালেবান ঘোষণা করেছিল, ঈদ হয়ে গেলে আফগান সরকারের সঙ্গে ফের শান্তি বৈঠকে বসতে প্রস্তুত তারা। আফগান সরকারও তাতে সম্মত হয়েছিল।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি সংসদ রায় দেয়, দ্রুত তালেবানের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। সেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছিল তালেবান এবং আফগান প্রশাসন। তালেবান জানিয়েছিল, আরও ৪০০ বন্দির মুক্তি হলে ১০ দিনের মধ্যে তারা বৈঠকে বসতে রাজি। সেই অনুযায়ী এই সপ্তাহের শেষের দিকে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। আফগান প্রশাসন জানিয়েছিল, ৪০০ বন্দিকে মুক্ত করা হবে। তালেবানকেও এক হাজার বন্দির সকলকে ছেড়ে দিতে হবে। তালেবান তাতে রাজি হয়েছিল। রোববার পর্যন্ত সেই মোতাবেক ৮০ জন তালেবান বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে আফগান সরকার। কিন্তু সোমবার তারা বাকি বন্দিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করে।
অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্সের চাপ
আফগান প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোনও কোনও দেশ সমস্ত তালেবান বন্দির মুক্তির বিরুদ্ধে। আফগান সরকারের উপর তারা চাপ সৃষ্টি করছে। আফগানিস্তান সরকার দেশগুলির নাম প্রকাশ করেনি। তবে অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্স সরাসরি নিজেদের আপত্তির কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে।
তাদের বক্তব্য, যে সমস্ত তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে বেশ কিছু 'জঙ্গি' রয়েছে। যারা অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্সের নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারদের হত্যা করেছে। ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার ওই সমস্ত বন্দির মুক্তিতে যথেষ্ট আপত্তি আছে।
কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন, আফগনা সরকার কি ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার এই দাবির সামনেই মাথা নত করল? ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার চাপ যে আফগান সরকারকে ভাবাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রকাশ্যে আফগান প্রশাসন তা মানতে চাইছে না। বরং তারা জানিয়েছে, তালেবানের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তা পালন করা হবে। কিন্তু সাময়িক ভাবে তা স্থগিত করা হয়েছে।
কেন স্থগিত হলো
প্রশ্ন উঠছে, ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার চাপ না থাকলে, কেন সোমবার আচমকা বন্দি মুক্তি স্থগিত করল আফগান সরকার? আফগান প্রশাসনের আরেক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তালেবানরা চুক্তি মেনে আফগান সেনাদের মুক্তি দিচ্ছে না। সে কারণেই তালেবান বন্দিদের মুক্তি আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। তবে দ্রুত এই জট কাটবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তালেবান অবশ্য জানিয়েছে, তারা নিয়ম মেনেই বন্দি হস্তান্তর করছে। আফগান সরকারই চুক্তিভঙ্গ করেছে।
ফেব্রুয়ারি থেকেই একে অপরকে দোষারোপ করছে আফগান সরকার এবং তালেবান। তালেবানের বক্তব্য, নিয়ম মেনে বন্দিদের মুক্ত করছে না আফগানিস্তান। আফগান সরকারের বক্তব্য, চুক্তি মেনে হামলা বন্ধ করেনি তালেবান। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, মার্কিন এবং আফগান সেনার যৌথ বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাবে না তালেবান। কিন্তু গত কয়েক মাসে তারা একাধিক আক্রমণ চালিয়েছে। আফগান সেনাও অবশ্য তালেবান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শান্তি বৈঠকের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তা খানিকটা নষ্ট হয়েছে। তবে দুই পক্ষই বৈঠকের বিষয়ে আশাবাদী। ফলে সমাধানসূত্র পাওয়া যাবে বলেই অধিকাংশের আশা।
এসজি/জিএইচ (এএফপি, রয়টার্স)