আফগানিস্তান নিয়ে দিল্লিতে আট দেশের বৈঠক
১০ নভেম্বর ২০২১আনুষ্ঠানিক নাম, দ্য দিল্লি রিজিওনাল সিকিউরিটি ডায়লগ, সংক্ষেপে দিল্লি ডায়লগ। বিষয় আফগানিস্তান। ভারতের উদ্যোগে আফগানিস্তান নিয়ে এই প্রথম অনেকগুলি দেশকে নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক হলো। বুধবার এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন রাশিয়া, ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান, তুর্কেমেনিস্তান এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা(এনএসএ)। আমন্ত্রণ সত্ত্বেও আসেননি পাকিস্তান ও চীনের এনএসএ। চীন জানিয়েছে, এই সময়ে তাদের আসা সম্ভব নয়। আর পাকিস্তান বলেছে, যারা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খারাপ করেছে, তারাই এখন এই ধরনের বৈঠক করছে, সেখানে যোগ দেয়ার প্রশ্ন নেই।
চীন ও পাকিস্তানের মনোভাব থেকে স্পষ্ট, তালেবান শাসিত আফগানিস্তান নিয়ে ভারত কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করুক, তা তারা চায় না। এমনিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের কোনো সীমান্ত নেই। তা সত্ত্বেও কেন ভারত এই বৈঠক ডেকেছে, তা বৈঠকের গোড়াতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন অজিত দোভাল। তিনি বলেছেন, ''আফগানিস্তানে কিছু ঘটলে তার প্রভাব পুরো অঞ্চলে পড়ে। তাই এই অঞ্চলের দেশগুলির আফগানিস্তান নিয়ে ঘনিষ্ট সহযোগিতা দরকার। এটাই হলো আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা করার জন্য সব চেয়ে ভাল সময়।''
এর আগে রাশিয়ার উদ্যোগে আফগনিস্তান নিয়ে দুইটি বৈঠক হয়েছে। সেই পথ ধরেই ভারতের এই উদ্যোগ। সাতটি দেশের এনএসএ বা নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গেও দেখা করেছেন এবং কথা বলেছেন।
দিল্লি ঘোষণাপত্র
আট দেশ এই বিষয়ে একমত হয়েছে যে, আফগানিস্তানে সার্বভৌমত্ব, স্থায়িত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানো হবে। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না। আফগানদের দুর্দশা নিয়েও চিন্তা প্রকাশ করেছে আট দেশ। সেই সঙ্গে কাবুল, কান্দাহার, কুন্দুজে বিস্ফোরণ ও জঙ্গি হামলার নিন্দা করা হয়েছে। এই অঞ্চলে মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ রুখতে সকলে সমন্বয় করে চলবে বলেও ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে।
অন্য দেশের মত
দিল্লির কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে তাজিকিস্তানের বক্তব্যে। সেদেশের সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি রহমতজন মাহমুদজোদা বলেছেন, ''আমরা আফগানিস্তানের মানুষের স্বার্থে তাদের সাহায্য করতে এই ধরনের বৈঠকে সবসময় যোগ দেব।''
তুর্কেমেনিস্তান জানিয়েছে, তাদের উদ্বেগ মাদক-পাচার নিয়ে। তাছাড়া তারা মানবিক কারণে আফগান জনগণের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলি বলে আসছে, কাবুল হলো মাদক পাচারের স্বর্গরাজ্য। ভারতের অভিযোগ, আফগানিস্তন থেকে পাকিস্তান হয়ে মাদক ভারতে আসে। কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার এর আগে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান হয়ে মাদক ভারতে আসে এবং তারপর তার সিংহভাগ ইউরোপে পাচার হয়। তালেবান শাসন শুরু হওয়ার পর তাই দেশগুলি মাদক পাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে।
তালেবানের প্রতিক্রিয়া
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কাবুলে সাংবাদিক সম্মেলনে এই বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। টোলো নিউজ জানাচ্ছে, জাবিউল্লাহ বলেছেন, দিল্লি রিজিওনাল সিকিউরিটি ডায়লগ নিয়ে তালেবান আশাবাদী।
তবে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র টুইট করে জানিয়েছেন, আফগান প্রতিনিধিদল বুধবার পাকিস্তান পৌঁছেছে। তারা পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে মস্কো ও কাবুলে আফগানিস্তান নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, সেটাকেই আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মানবিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক বিষয়গুলি নিয়ে কথা হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ভারত বৈঠকে চীন ও পাকিস্তানকে ডেকেছিল। তারা আসেনি। পাকিস্তান এখন দেখাতে চাইছে, আফগানিস্তানের বিষয়ে তারাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তালেবান নেতাদের সবসময়ই সমর্থন করছে পাকিস্তান। তালেবান নেতারা পাকিস্তানে থেকেছেন। ইসলামাবাদ এখন জাহির করতে চাইছে, ভারত নয়, তারাই এব্যাপারে সব চেয়ে প্রভাবশালী দেশ।'' আর আশিস মনে করেন, ''ভারত এই পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাই ভারতও বৈঠকে উদ্যোগী হয়েছে। সেই বৈঠকে রাশিয়া ও ইরানের যোগদান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)