আফগানিস্তানে শরণার্থীদের সমস্যা
৪ মে ২০০৫সাড়ে তিন বছরে ৩৫ লক্ষ শরণার্থীর প্রত্যাবর্তন ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশাল এক চ্যালেঞ্জ৷ এঁদের বেশীরভাগই আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও ইরানে৷ শরণার্থীদের একটা ছোট অংশ ইউরোপেও আশ্রয় পেয়েছিলেন৷
শরণার্থীরা যেভাবে দলে-দলে দেশে ফিরে গেছেন, তার মাধ্যমে দেশের প্রতি তাঁদের টান কতটা - সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ নতুন পরিবেশে তাঁরা আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চান৷ তবে ৩৫ লক্ষ শরণার্থীর ফেরার সিদ্ধান্তের অর্থ এই নয়, যে আফগানিস্তানে আর কোনো সমস্যা নেই৷ যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের প্রায় সবারই এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে৷
সবচেয়ে বড় সমস্যা বাসস্থান নিয়ে৷ বিশেষ করে রাজধানী কাবুলে মাথা গোঁজার জায়গা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন৷ ফলে অনেককেই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অথবা অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করতে হচ্ছে৷ এই সমস্যা সত্ত্বেও কাবুল ছেড়ে চলে যাওয়া সহজ নয়, কারণ কাবুলের বাইরে অন্য কোথাও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷ যাঁরা নিজেদের গ্রামে ফিরে গেছেন, তাঁদের অবস্থাও মোটেই সুখকর নয় - স্থানীয় ওয়ারলর্ডদের কবল থেকে নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষা করতে তাঁদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক সাহায্যের ফলে আফগানিস্তানে অবশ্যই কিছু উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সাহায্য সংস্থা UNHCR দেশে ফিরে আসা শরণার্থীদের নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে৷ অনেক জায়গায় কুঁয়ো খোঁড়া হয়েছে, নতুন বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে৷ তবে স্বাভাবিকভাবেই শরণার্থীদের বিপুল সংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না৷
অনুমান করা হচ্ছে, যে এখনো প্রায় ৩০ লক্ষ আফগান শরণার্থী বিদেশের মাটিতে বসবাস করছেন৷ তাঁরা যাতে তড়িঘড়ি করে দেশে ফেরার চেষ্টা না করেন, জাতিসংঘ ইতিমধ্যে সেবিষয়ে সাবধানবাণী জারি করেছে৷ বহু বছর বা দশক ধরে বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে অনেকেরই বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে - বিশেষ করে সমাজে যেভাবে রক্ষণশীল ইসলামী ধ্যানধারণা জাঁকিয়ে বসেছে, তা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ মোটকথা তালেবানদের পতনের পর আফিগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটলেও দেশটি এখনো পুরোপুরি নিরাপদ হয়ে ওঠে নি৷
তালেবানদের পতনের পর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মোটামুটি নির্বিঘ্নে অগ্রসর হয়েছে৷ গত বছরের অক্টোবার মাসে প্রথম নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ মিলিশিয়া বাহিনীর নিরস্ত্রীকরণের কাজও ভালোই এগোচ্ছে৷ এসবের ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ কমে চলেছে৷ এসব সত্ত্বেও এখনো বেশ কয়েকজন মিলিশিয়া কমান্ডার ও মাদক দ্রব্যের চোরাচালকারী দলের নেতা বেশ সক্রিয়৷ অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে ল্যান্ড মাইন ও অস্ত্রভান্ডার, ডাকাতি, চোরাগোপ্তা হামলা৷ মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক হয়ে ওঠে নি৷
এসবের পরেও অনেক আফগান শরণার্থী দেশে ফিরছেন৷ এঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলি ইত্যাদি পেশার মানুষ৷ আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য এঁদের সাহায্যের আশু প্রয়োজন৷ এঁদের মধ্যে অনেকেই আফগানিস্তানে ফিরে পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন - যদিও তাঁদের সংখ্যা অত্যন্ত কম৷