আফগানিস্তানে রেডক্রস কর্মীদের ওপর হামলা
২ ডিসেম্বর ২০১১সাধারণ মানুষদের সাহায্য করতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের বেশ বড় একটি দল অবস্থান করছে আফগানিস্তানে৷ রেড ক্রসের এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে বেশ কয়েকটি৷ এছাড়া বেশ কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন যারা হাসপাতালে সাধারণ মানুষদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন৷ কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হল হাসপাতাল পর্যন্তই অনেকে আসতে পারছে না৷ আর ইদানিং এ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করছে জঙ্গিরা৷
হাস্তি খানের বয়স ১৮৷ হিলমান্দ শহরের ছেলে৷ একটি বিয়ে বাড়িতে সবাই বেশ হৈচৈ করছিল৷ ঠিক সেই সময়ে বিমান হামলা চালানো হয়৷ সবাই রক্তাক্ত অবস্থায় ছিটকে পড়ে আশেপাশে৷ হাস্তির তলপেট গুরুতরভাবে জখম হয়৷ গ্রেনেডে ক্ষতবিক্ষত হয় তার তলপেট এবং সারা শরীর ঝলসে যায়৷ তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন৷ ক্ষোভ এবং আক্ষেপের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই জানান, ‘‘পুরো জায়গাটা মাইন বসানো৷ কোন দিকেই যাওয়া সম্ভব নয়৷ সব রাস্তা বন্ধ৷'' কোন এ্যাম্বুলেন্সও তাঁর ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিল না৷ কোন ট্যাক্সিও না৷ কারণ যে পথ দিয়ে তারা যাবে সেখানে ওৎ পেতে বসে আছে জঙ্গিরা৷ গাড়ি দেখলেই তারা হামলা করবে৷ কেউই তখন বাঁচবে না৷ এরপর অনেক পথ পেরিয়ে কান্দাহারের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হাস্তিকে৷
এ ধরণের ঘটনা ঘটছে সংঘাত-সংঘর্ষপূর্ণ এলাকায়
তবে হাস্তির মত অসংখ্য ঘটনা ঘটছে আফগানিস্তানে৷ কথাগুলো জানান, জেনেভায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের কর্মকর্তা বিজান ফারনুদি৷ তিনি বলেন,‘‘আফগানিস্তানের মত জায়গায় আমরা গত দুবছর ধরে কাজ করছি৷ প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কাছে মায়েরা আসে তাদের রুগ্ন শিশুদের নিয়ে৷ খুবই সামান্য সমস্যা৷ একটু হালকা চিকিৎসাতেই সব সারানো সম্ভব কিন্তু তারপরেও এসব অসুখে ভুগে বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছে৷ এর মূল কারণ হল হাসপাতাল পর্যন্ত তারা আসতে পারছে না৷ পুরো পথে পাহারা দিয়ে বসে আছে জঙ্গিরা৷ বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সাহস এদের কারো নেই৷''
শুধু আফগানিস্তান নয় যে কোন সংঘাত-সংঘর্ষপূর্ণ এলাকার চিত্র একই৷ হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের পথগুলো সবসময়ই আটকে রাখা হয়৷ অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে আছে জঙ্গিরা৷ তারা সবসময়ই নজর রাখছে রাস্তার ওপর৷ তারাই সিদ্ধান্ত নেয় কে এই রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে আর কে পারবে না৷ প্রায়ই দেখা যায় চিকিৎসক ওষুধপত্র নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে করে যাচ্ছেন৷ একদিন হয়ত যেতে পারলেন৷ কিন্তু অন্যদিন তাঁকে আটকে দেয়া হয়৷ কথাগুলো জানান চিকিৎসক আলব্যার্টো কায়রো৷ তিনি আফগানিস্তানে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন,‘‘হঠাৎ করেই আমাদের কাছে খবর আসে নতুন একজন কমান্ডার দায়িত্ব নিয়েছেন৷ আগের নিয়ম কানুন বাতিল৷ সে আমাদের কাউকেই চেনে না৷ তখন আমাদের জন্যও বের হওয়া সম্ভব হয় না৷ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ৷ তখন আমরাই রোগীদের বলি বাসায় বসে থাকতে৷''
আফগানিস্তানে এভাবে চিকিৎসার অভাবে কত মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ হাসপাতাল দূরের পথ নয় কিন্তু অনেকেই হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে পারছে না৷ এমন কি তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মত ওষুধ-পত্র, চিকিৎসক এবং এ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও তাদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক