আফগান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের আভাস
২৩ নভেম্বর ২০২১প্রতিবেদনে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) বলেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা্৷ বিপর্যয় এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বানও জানানো হয় প্রতিবেদনে৷
বিপর্যস্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা
প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাতের আমানত খুব দ্রুত কমে আসছে৷ ২০২০ সালের শেষ নাগাদ সে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ২৬৮ বিলিয়ন আফগানির আমানত ছিল, এই মুহূর্তে তা কমে হয়েছে ১৯৪ বিলিয়ন আফগানি (দুই বিলিয়ন ডলার)৷ ইউএনডিপির আশঙ্কা, ২০২১ সালের শেষে আমানতের পরিমান আরো কমে ১৬৫ বিলিয়ন আফগানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে৷
বর্তমানে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং সেক্টরে রয়েছে ১২টি বাণিজ্যিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান৷ এর মধ্যে ছয়টি প্রাইভেট কমার্শিয়েল ব্যাংক, একটি প্রাইভেট ইসলামি ব্যাংক, তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংক এবং দুটি বিদেশি ব্যাংক৷ ২০২০ সালের শেষ দিকের এক হিসেবে দেখা যায়, আফগানিস্তানের ব্যাংকিং সেক্টরের মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশের মালিকানা রয়েছে আফগান ব্যক্তিদের হাতে৷
আফগানিস্তানের ব্যাংকিং সেক্টর টিকে আছে মূলত কাবুল, হেরাত আর মাজার-ই-শরিফকে ঘিরে৷ প্রধান ব্যাংকগুলোর ৪০০টি শাখার বেশিরভাগই রয়েছে এই তিন শহরে৷ শহরকেন্দ্রিক ব্যাংকগুলোর প্রায় ৬০ভাগ লেনদেনই বিদেশি মুদ্রা, বিশেষ করে ডলার নির্ভর৷ কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় ফেরার কয়েক সপ্তাহ পর দেশের সব ব্যাংক খোলা হলেও ব্যাংকগুলো ভালো অবস্থায় নেই৷ সেবাগ্রহিতাদের তারা ঋণ দিতে পারছে না নগদ টাকার অভাবের কারণে৷ ইউএনডিপির আফগানিস্তান ব্যুরোর প্রধান আল দারদারি মনে করেন, এ অবস্থার একটি কারণ আফগানদের মনে জন্ম নেয়া ভীতি৷ আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে যে চার মিলিয়ন ডলার রয়েছে সেখান থেকে মাত্র পাঁচ লাখ ডলার এখন বাজারে ঘুরছে৷ বাকিটা পুরোই রয়ে গেছে আফগানদের হাতে৷ আল দারদারি বলেন, ‘‘লোকজন ভয়ে আছে বলে বাকি টাকাটা এখন গদি বা বালিশের নীচে পড়ে আছে৷৷ ''
রক্ষার একমাত্র উপায়
তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাতের ভগ্নদশা দেশটির জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ইউএনডিপির আফগানিস্তান ব্যুরোর প্রধান আব্দাল্লাহ আল দারদারি৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘ব্যাংকিং সেক্টরকে বাদ দিয়ে আফগানিস্তানের চলমান সংকটের মানবিক সমাধান কখনো সম্ভব নয়৷'' তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানের বিষয়ে সার্বিক নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তার প্রসঙ্গ টেনে তার প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি আসলে আফগানিস্তানকে বিচ্ছিন্ন দেখতে চাই?''
আশুতোষ পান্ডে/এসিবি