নতুন সংবিধানের দাবি তালেবানের
২৪ ডিসেম্বর ২০১২ফ্রান্স ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ বা এফআরএস এর উদ্যোগে প্যারিসের এক অজ্ঞাত স্থানে দুই দিনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে আফগানিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের দুই শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি শাহাবুদ্দিন দিলাওয়ার এবং নায়িম ওয়ারদাক উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া আফগান সরকারের কিছু কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ছিলেন৷ ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সেনা অভিযানে তালেবানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর ফরাসি সংস্থার উদ্যোগে আফগান সরকার এবং তালেবানের মধ্যে এমন বৈঠক এটিই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে৷
প্যারিস বৈঠকের শেষে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়৷ এটি উপস্থিত প্রতিনিধিদের দেওয়া হয় এবং পরে গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো হয়৷ এই ঘোষণাপত্রে তালেবান নেতাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের কাছে আফগানিস্তানের বর্তমান সংবিধানের কোন মূল্য নেই৷ কারণ এটি ২০০৪ সালে বি ৫২ যুদ্ধ বিমানের চাপের মুখে তৈরি করা হয়৷''
এতে আরো বলা হয়, ‘‘ইসলামি আমিরাত আফগানিস্তানের সাহসী জাতির জন্য দরকার এমন একটি সংবিধান যা হবে ইসলাম ধর্মের নীতি, জাতীয় স্বার্থ, ঐতিহাসিক অর্জন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে রচিত৷ আমরা চাই সকল আফগান মানুষের প্রত্যাশার ঐকমত্যের সরকার৷'' তালেবান নেতারা জোর দিয়ে বলেন, তারা ‘এককভাবে ক্ষমতা চায় না৷' তালেবান নেতা মোল্লাহ ওমরের কথা উল্লেখ করে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, তিনি ‘তাঁর বিরোধীদের সম্মান করেন এবং পারস্পরিক সমঝোতার উপর জোর দেন এবং সকলকে দেশরক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান৷'
সংবিধানে নারী অধিকারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রাখার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে তালেবান নেতারা বলেন, ‘নারী অধিকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা রয়েছে এবং ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে' তা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা হবে৷ তাঁদের ভাষায়, ‘‘ইসলামের বিধানে একজন নারীর বিয়ে করার, সম্পত্তির অংশ পাওয়ার, সম্পদের অধিকারী হওয়ার, শিক্ষা গ্রহণের এবং কাজের অধিকার দেওয়া হয়েছে৷''
আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা ফিরে গেলে দেশটির অবস্থার যেন অবনতি না ঘটে সেজন্য প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এর সরকারের সাথে তালেবান এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে একটি সমঝোতায় আনার লক্ষ্যেই প্যারিসে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল৷ ইতিমধ্যে হামিদ কারজাই এর সরকার শান্তির জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে৷ এই পরিকল্পনার আওতায় দেশটির শিশু গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে তালেবান এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে সফলতার জন্য প্রথম ধাপে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আটক থাকা তালেবান নেতাদের মুক্তির জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷
তবে এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও কাবুল সরকারের প্রতি এখনও তালেবান নেতাদের আস্থা তৈরি হয়নি৷ তাদের ভাষায়, ‘‘আফগানিস্তানে আগ্রাসন পরিচালনাকারীরা এবং তাদের মিত্রদের শান্তির জন্য সুস্পষ্ট কোন প্রস্তাব নেই৷ তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার অজুহাতে আমাদের ধর্মযোদ্ধাদের বলে আত্মসমর্পণ করতে, অস্ত্র জমা দিতে, তাদের সংবিধান মেনে নিতে এবং তাদের আদেশ মেনে চলতে বলে৷ এটা কোন শান্তি প্রক্রিয়া হলো?''
আফগানিস্তানের শান্তির জন্য সকল বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারকে পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তালেবান নেতারা৷ আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহারে ফরাসি সরকারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে তালেবান নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের প্রতিও দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন৷
এএইচ / আরআই (ডিপিএ, এএফপি)