আপোশকামিতার অভিযোগে সু চির জবাব
১৮ এপ্রিল ২০১৩মিয়ানমারে যে ক'দিন পরপরই শুরু হয় বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দাঙ্গা, শত শত রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হন, প্রাণও যায় অনেকের – এ বিষয়ে নোবেল জয়ী সু চি যে একেবারে নীরব তা কিন্তু নয়৷ তবে যেটুকু বলেন এবং যা বলেন তা শান্তির পক্ষে দীর্ঘদিন লড়াই করা এক নেত্রীর সঙ্গে ঠিক মানানসই কিনা সন্দেহ৷ এ নিয়ে আগেও কথা হয়েছে৷ গত বছরের নভেম্বরে ভারত সফর করার সময় এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাঙ্গার জন্য বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গা দু'পক্ষেরই নিন্দা করেছিলেন৷ আরো জানিয়েছিলেন, দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করতে চান বলেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান৷ তখন তাঁর আরেকটি মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশেও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল৷ সেবার বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক, তাঁদের পূর্ণ অধিকার পাওয়া উচিত৷ তবে কিছু মানুষ বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে এসেছে কিনা, এই প্রশ্নে বিরোধ রয়েছে৷ সীমান্তে নিরাপত্তার দিকটি দেখা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু'দেশেরই দায়িত্ব৷ তাই যদি বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটে, তা বন্ধ করতে হবে৷''
রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকের স্বীকৃতি মিয়ানমারের সংবিধানও দেয়নি৷ তাই সে দেশে সব সময়ই তাঁরা নিজভূমেও পরবাসী৷ তবু গণতন্ত্রের জন্য ১৫ বছর অন্তরিন থাকা সু চির কাছে তাঁদের আশা তিনি নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের প্রতি সুবিচারের দাবিতে, তাঁদের বৌদ্ধদের পাশে সম্মানজনক এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সোচ্চার হবেন৷ কিন্তু সে আশার গুড়ে আবারও পড়ল বালি৷ এ সপ্তাহে জাপান সফর করছেন সু চি৷ তার আগে নতুন করে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাঁর ‘আপোশকামী রাজনীতি'-র সমালোচনা৷ ক্রিস লেওয়া সেই সমালোচকদের একজন৷ ব্যাংকক ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট'-এর পরিচালক লেওয়া মনে করেন মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের অবশ্যই রক্ষা করা উচিত, এ ব্যাপারে বেশি ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা সু চির কাছেই বেশি, অথচ রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তিনি এখনো আইন-কানুন মনে করিয়ে দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছু বলছেন না৷
সু চির বুধবারের বক্তব্যেও নতুন কিছু পাওয়া যায়নি৷ বারবার একই বিষয় তোলা হচ্ছে বলে মৃদু অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বরাবরই নিজের মনোভাবের কথা সবাইকে জানিয়ে আসছেন৷ মনোভাবটা কী? তাঁর মোদ্দা কথা হলো, ‘‘মুসলিম নেতাদের সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে আমার৷ তাঁদের জন্য আমার কষ্ট হয়৷ (রোহিঙ্গা) মুসলমানরা কখনোই মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশকে নিজের দেশ ভাবেননি৷ তাঁরা অন্য কোনো দেশের হতে পারেন এটা তাঁদের অনুভূতিতেই নেই৷ আরো কষ্টের ব্যাপার হলো তাঁদের এ কথা ভাবতে বাধ্য করা যে এ দেশ তাঁদের নয়৷ সবার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান রেখেই বলছি, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক কিনা, এটা কিন্তু নির্ভর করছে দেশের প্রচলিত নাগরিক আইনের শর্তগুলো তাঁরা কতটা পূরণ করছেন তার ওপর৷''
অর্থাৎ, প্রকারান্তরে অং সান সুচি কিন্তু ‘রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের নাগরিক নন' – এই ধারণাকে খানিকটা ভিত্তিই দিয়ে দিলেন!
এসিবি/ডিজি (এএফপি)