সিরিয়ায় অচলাবস্থা
১৬ মার্চ ২০১২
সিরিয়ার বিপ্লবীরা নাকি বাইরের সামরিক হস্তক্ষেপ চাইছেন
রাজধানী দামেস্ক থেকে গোটা দেশেই প্রায় একইরকমের দাবি এখম সিরিয়ায়৷ দাবি, আনান’এর কাছে৷ জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আনান এখন সিরিয়ার সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন৷ সিরিয়াকে ঘিরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ স্পষ্ট দুইভাগে বিভক্ত৷ একদল, পাশ্চাত্ত্যের দেশগুলির দাবি, সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হোক, আর অন্য দল, চীন আর রাশিয়ার বক্তব্য, বিশেষ করে কোনরকম নিষেধাজ্ঞায় না যেতে৷ বস্তুত, কোনভাবেই সিরিয়ায় বাইরের সেনা আগ্রাসনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন আনান স্বয়ং৷ কিছুক্ষণ আগে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, সিরিয়ার প্রশাসন সেদেশের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাপরিচালক কোফি আনান’এর সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত৷
কিন্তু আসাদ বিরোধীদের মুখে অন্য সুর
আসলে দেশজুড়ে আসাদ বিরোধী বিপ্লবে যাঁরা পা মিলিয়েছেন, তাঁদের মুখে আজ শুক্রবার সিরিয়ার সব শহর থেকেই দাবি উঠছে, আনান কিছু একটা করুন৷ বাইরের সেনাবাহিনী এনে সিরিয়াকে আসাদের শাসনমুক্ত করা হোক৷ অবিলম্বে আরব আর মুসলিম দুনিয়া সিরিয়ার বিষয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ করুক৷ প্রথমে তারা, পরে বাকি দুনিয়াও যেন এগিয়ে আসে আর সিরিয়ার মানুষকে এই অসহ্য পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়৷ সিরিয়ান রিভোল্যুশন ২০১১ নামের ফেসবুক পেজেও আহ্বান জানানোন হয়েছে, এই সামরিক হস্তক্ষেপের দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদে সামিল হতে সাধারণ মানুষকে৷
আরব দুনিয়ার অবস্থান
আরব দুনিয়ায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশ আরব বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র সৌদি আরবের নেতৃত্ব মেনে নিতে রাজি৷ তারা জানিয়েছে, সৌদি আরব যেদিকে দিকনির্দেশ করবে, তারা সেদিকেই যাবে৷ আনান আপাতত সৌদি আরবের সঙ্গে যেমন, সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গেও একইরকম ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তাঁর দপ্তর থেকে মুখপাত্র আহমেদ ফৌজি জানাচ্ছেন, আনান এই মুহূর্তে কোন সিদ্ধান্ত জানাবেন না৷ তিনি আরেকটু সময় চান৷ কারণ, তিনি কথা বলছেন সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে৷
জাতিসংঘের ভূমিকা
জাতিসংঘের ভিতরে আগামী সোমবারের মধ্যে সিরিয়া প্রসঙ্গে একটা সিদ্ধান্তে আসার জন্য আর্জি জানিয়েছেন মহাসচিব বান কি-মুন৷ সিরিয়া প্রশ্নে আরব সদস্যদের একরকমের দাবি, মস্কো আর বেইজিং নরমপন্থার বাইরে বেরোবে না আর পাশ্চাত্ত্য দুনিয়া চায় সিরিয়াকে কোণঠাসা করে নিয়ে তারপর উচিত শিক্ষা দিতে৷ কারণ, আসাদের একগুঁয়েমি কোনভাবেই ভাঙা যাচ্ছে না৷ বারংবার নিষেধ, হুমকি, অনুরোধ উপরোধের তোয়াক্বা না করে আসাদ সেনাবাহিনী লেলিয়েই একের পর এক শহর বিদ্রোহীদের কবল থেকে দখল করে চলেছেন৷ জাতিসংঘের হিসেব বলছে, ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ইতিমধ্যেই গত এক বছরে ঘটেছে৷ বেসরকারি হিসেব এর অনেক বেশি৷ দেশজুড়ে রক্তপাত, প্রতিবাদ বিক্ষোভ আর অস্থিরতার সর্বশেষ পরিণাম গৃহযুদ্ধের দিকেই এগোচ্ছে, আরব বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সিরিয়া৷
আনানের রিপোর্ট আসলে গুরুত্বপূর্ণ
কোফি আনান জাতিসংঘের কাছে কী রিপোর্ট পেশ করেন, সেদিকেই এখন অনেকেরই দৃষ্টি৷ বিশেষ করে আনান যদি আসাদের উচ্ছেদের পক্ষে মত দেন, তাহলে বিষয়টি অন্যদিকে গড়াবে৷ তবে, সেটা মনে করছে না ওয়াকিবহাল মহল৷ আলোচনার পথেই সমাধান খুঁজবেন আনান৷ যেটা ততটা কঠিন নয়৷ অন্তত যা আরেকটা যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উস্কে দেবেনা৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ