আদালতের নির্দেশে উত্তর প্রদেশে নিষিদ্ধ হলো মাদ্রাসা
২৫ মার্চ ২০২৪শুক্রবার ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট এ রায় দেয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ রায়ের ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির সঙ্গে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানদের দূরত্ব আরেকটু বাড়লো বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী মাসে ভারতে জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হবে।
ইসলাম ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম হচ্ছে মাদ্রাসা। যেখানে মূলত ইসলাম শিক্ষা দেওয়া হয়।
রয়টার্স জানায়, আদালত শুক্রবার উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা পরিচালনাকারী আইন-২০০৪ বাতিল করে। রায়ে বলা হয়, "এই আইন ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থি।”
রায়ে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীদের প্রচলিত স্কুলগুলোতে শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে।
এলাহাবাদ হাই কোর্টের এই রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থী, ১০ হাজার শিক্ষক এবং ২৫ হাজার মাদ্রাসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদ।
উত্তর প্রদেশে মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ মুসলমান।
শুক্রবারের রায়ে বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থী এবং বিবেক চৌধুরি বলেন, "রাজ্য সরকার এটাও নিশ্চিত করবে যে রাজ্যের ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী কোনো শিশু যেনো যথাযথভাবে স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।”
অংশুমান সিং রাঠোর নামে একজন আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে এলাহাবাদ হাই কোর্ট মাদ্রাসা নিষিদ্ধের এই রায় দেয়।
অংশুমান সিং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা বা তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে বা তাদের মতাদর্শে উৎসাহিত হয়ে হাই কোর্টে এই আবেদন করেছেন কিনা জানতে রয়টার্স থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ভারতে জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। সাত দফায় ভোট গ্রহণ চলবে ১ জুন পর্যন্ত। ৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে মোদীর দল বিজেপিই জয়লাভ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কয়েকটি মানবাধিকার এবং মুসলমানদের সংগঠন থেকে বিজেপির কিছু সদস্য এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য প্রদান, প্রশাসনের মাধ্যমে হয়রানি এবং মুসলিমদের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে ভাংচুরের অভিযোগ করা হয়েছে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদী বরাবর ভারতে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেন।
বিজেপি বলেছে, তাদের সরকার ঐতিহাসিক ভুলগুলো ঠিক করে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিচ্ছে। যেমন: সম্প্রতি ষোড়শ শতকে নির্মিতবাবরি মসজিদের জায়গায় এখন রাম মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। হিন্দু ধর্মের অনেকের বিশ্বাস যেখানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি আসলে হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থান এবং মুঘল শাসক বাবর একটি হিন্দু মন্দির ভেঙে সেখানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
উত্তর প্রদেশের ক্ষমতা এখন বিজেপির হাতে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠী রয়টার্সকে বলেন, রাজ্য সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে নয়। বরং তারা মুসলমান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন।
"আমরা কোনো মাদ্রাসার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমরা ভেদাভেদের যে অনুশীলন চলে তার বিরুদ্ধে। আমরা অবৈধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে। আদালতের নির্দেশ অনুসরণ করে রাজ্য সরকার এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”
উত্তর প্রদেশ সরকার অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ বছর জানুয়ারি থেকেই মাদ্রাসার জন্য সরকারি তহবিল প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। যার ফলে বেকার হয়ে পড়েন প্রায় ২১ হাজার মাদ্রাসা শিক্ষক। ২০২২ সালে মার্চে মোদী সরকার ‘দ্য স্কিম ফর প্রভাইডিং কোয়ালিটি এডুকেশন ইন মাদ্রাসা' প্রকল্পে তহবিল প্রদান বন্ধ করে দেয়।
এলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে শুক্রবার যে রায় এসেছে তা রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি মাদ্রাসার উপরই কার্যকর হবে বলে জানান জাভেদ।
আদালত থেকে কবে নাগাদ এ রায় বাস্তবায়ন শুরু হবে তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেয়নি। তবে জাভেদ বলেছেন, মাদ্রাসাগুলো এখনই সম্ভবত বন্ধ হচ্ছে না।
ভারতের উত্তরপূর্বের আরেক রাজ্য আসামে শত শত মাদ্রাসাকে প্রচলিত স্কুলে রূপান্তর করা হচ্ছে বলেও খবর রয়টার্সের। উত্তর প্রদেশের মত আসামেও ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি।
এসএন/ কেএম (রয়টার্স)