আড়ি পাতার ইতিবৃত্ত
১৫ মার্চ ২০১৪ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে গুপ্তচরবৃত্তি বাকিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়েই শুরু হয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে প্রথম কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ব্লেচলি পার্ক৷ মান্ধাতার আমলের যন্ত্র দিয়ে তাঁরা নাৎসি জার্মানির বিখ্যাত ‘এনিগমা' কম্পিউটারের কোড ভাঙতে পেরেছিলেন৷ এনএসএ বা ব্রিটেনের জিসিএইচকিউ আজ যেভাবে আড়ি পাতে, সেই প্রযুক্তির পথিকৃৎ ছিলেন পার্ক৷
মারিকা জোসেফিডেস ও স্যাম গার্সিয়াও পুরানো এই সব যন্ত্রপাতির আকর্ষণ কাটাতে পারেন না৷ দু'জনেই নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কাঠামো নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ মারিকা বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এটা সত্যি যুদ্ধ জিতিয়ে দিয়েছিল৷ অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাংকের পাশাপাশি গুপ্তচরবৃত্তিরও ভূমিকা ছিল৷'' স্যাম মনে করেন, ‘‘আসলে ভালোই কাজ হয়েছে৷ আমাদের জিততে সহায়তা করেছে৷ মিত্রশক্তি, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে৷ আজও গোপন করার অনেক কিছু রয়েছে৷ আমাদের জয় হবে বলে আশা করি৷''
এই তরুণ-তরুণীরা সত্যি ‘উইনার'-দের মধ্যেই পড়ে৷ কারণ আজকাল শিল্পজগত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ বেসরকারি বাকিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রায় অর্ধেকই বিদেশি৷ অনেকেই অর্থ কামাতে নয়, নিজেদের দেশে গণতন্ত্রের সুরক্ষা করতে চান৷ এক ছাত্রী বললেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ, তার মোকাবিলা, গুপ্তচরদের কার্যকলাপ – এ সব আমার জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক, কারণ টিউনিশিয়ায় বিপ্লবের পর আমাদেরও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে৷ টিউনিশিয়ায় কী হচ্ছে, তা আমার বু্ঝতে হয়ত সুবিধা হবে৷'' ক্লাসে ইন্টারনেটে নজরদারির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এক ছাত্র বললেন, ‘‘আমাদের উপর নজরদারি চলুক, সেটা চাই না৷''
স্নোডেনের ঘটনার পর থেকে অনেক প্রশ্ন উঠছে৷ কারণ একদিকে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যক্তিগত তথ্যর অধিকার, অন্যদিকে ইলেকট্রনিক নজরদারি – এই দুটির মধ্যে সমন্বয় আনা কঠিন৷ বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্টনি গ্লিস বলেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের চিন্তাভাবনার উপর স্নোডেন একটা বড় প্রভাব ফেলেছে৷ তাঁদের মনে যে সন্দেহ ছিল, স্নোডেন সেটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ অন্যদিকে যে সব ছাত্র-ছাত্রী সত্যি বিষয়টা জানতে চান এবং যাঁরা আগে থেকেই জানেন, তাঁরা স্নোডেনকে নিয়েই সংশয়ে ভুগছেন, গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়ে নয়৷''
ছাত্র-ছাত্রীরা নজরদারির সব খুঁটিনাটি বিষয় আয়ত্ত করলেও তাঁদের নিজেদের আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না৷ যেমন মারিকা দিব্যি ই-মেল পাঠাচ্ছেন, ফেসবুক ব্যবহার করছেন৷ মারিকা বলেন, ‘‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কার্যকলাপ সত্ত্বেও অনলাইনে মোটামুটি নিশ্চিন্তে বিচরণ করা যায়৷ শুধু একটু ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হয়৷ যাকে-তাকে অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য দেবেন না, কোনো অদ্ভুত, সন্দেহজনক ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করবেন না৷ নিজের আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন৷ বাস্তব জীবনে বন্ধুদের যে কথা বলি না, তা অনলাইনে প্রকাশ করারও কোনো প্রয়োজন নেই৷''
গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে, তা ফাঁস হওয়ার পর তথ্য সংরক্ষণকারীরা অবশ্য এমন যুক্তি মানতে নারাজ৷ তারা ইন্টারনেট কোম্পানিগুলির তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে ব্যবহারকারীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিচ্ছে৷ ছাত্র-ছাত্রীদের মতে, সংবাদ মাধ্যম কিছুটা বাড়াবাড়ি করছে৷ সাধারণ মানুষের নাকি চিন্তার কোনো কারণ নেই৷ স্যাম মনে করেন, ‘‘আপনি কোনো অন্যায় না করে থাকলে দুশ্চিন্তারও কারণ নেই৷ তারা আপনার দিকে তাকিয়েও দেখবে না৷ চাইলে তারা করতেই পারে, কিন্তু কোনো কারণ তো নেই৷ তারা সব তথ্য ঘেঁটে আপনার সম্পর্কে কিছুই পায়নি৷ আপনি কিছু করে না থাকলে তারা পরীক্ষা করবে না৷''
কম্পিউটারের আদি লগ্ন থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজে অনেক অগ্রগতি ঘটেছে৷ মনে হচ্ছে, ইন্টারনেট প্রজন্মের একটা অংশ কিছুটা রাষ্ট্রীয় নজরদারি মেনে নিতে প্রস্তুত৷