1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আক্রান্ত সুন্দরগঞ্জ

আশীষ চক্রবর্ত্তী১৮ মার্চ ২০১৩

হাফিজা বেগম কাকলি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, সংগীতের অনুরাগী শিল্পী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী৷ জামায়াত-শিবিরের আগুনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুড়েছে, পুড়েছে হারমোনিয়াম থেকে শুরু করে সমস্ত বাদ্যযন্ত্র, ১৬ মাসের শিশুর ফিডারটাও বাদ যায়নি!

https://p.dw.com/p/17zXt
ছবি: Shayantani Twisha

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় ঘোষণা করার পর দেশের বেশ কিছু জায়গায় ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷ তাণ্ডবের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখেছে সম্ভবত গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা৷

আক্রান্ত সুন্দরগঞ্জ নিয়ে বলছেন হাফিজা বেগম কাকলি

সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট তো সেখানে পুড়ে ছাই হয়েছেই, সরকারি সম্পদ বাদ যায়নি, প্রাণ গেছে ৪ পুলিশ সদস্যের, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরের কর্মী মারা গেছে তার চেয়েও বেশি৷ ১০-১৫ হাজার উন্মত্ত মানুষ কীভাবে হামলা চালিয়েছিল, তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাত্র ১০-১৫ জন পুলিশ কী অবস্থায় গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছিল সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়ে গত ৬ই মার্চ তা জানিয়েছিল ডয়চে ভেলে৷

এবার কথা হলো সংগীত শিল্পী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা বেগম কাকলির সঙ্গে৷ এমন একজনের সঙ্গে কথা বলার প্রধান কারণ হামলার ক্ষয়ক্ষতি এবং তার পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নেয়া৷ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে জানা গেল কাকলির স্বামী আহসানুল করিম চাঁদও সংগীত শিল্পী৷ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে স্থানীয় রাজনীতিতে তিনিও সক্রিয়৷ বাংলাদেশে একটা ধারণা খুব প্রচলিত৷ সরকারি দল করলে নাকি খুব সুবিধা৷ নেতা-নেত্রী হলে তো কথাই নেই! হাফিজা বেগম কাকলির অভিজ্ঞতা অবশ্য তা একেবারেই বলছেনা৷ স্বামী-স্ত্রী দুজনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও জামায়াত-শিবিরের হামলায় যেখানে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির প্রায় সবই শেষ, সেখানে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা তো এই সাক্ষাৎকার শুনেই অনুমান করা সম্ভব৷

Zerstörte Wohnhäuser in Sundorgonj Gaibandha Bangladesch
ছবি: Shayantani Twisha

জামায়াত-শিবির হামলা চালিয়েছে নির্বিচারে৷ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেই তাঁর ওপর হামলা চালাতে হবে- দেশের রাজনীতিতে অতীতে এমন নজীর দেখা গেলেও গাইবান্ধায় জামায়াত এবার বেছে বেছে শুধু প্রতিপক্ষককেই মারেনি, পোড়ানোর সময় বাদ দেয়নি মুটে-মজুর-রিক্সাচালক, পান দোকানদার, বিত্তবান, হিন্দু-মুসলিম কাউকেই৷ বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী কয়েক হাজার লোক এক হয়ে অপ্রস্তুত, নিরস্ত্র মানুষদের ওপর হামলা চালাচ্ছে- এমনটিও বাংলাদেশ আগে কি দেখেছে কখনো?

Zerstörte Wohnhäuser in Sundorgonj Gaibandha Bangladesch
ছবি: Shayantani Twisha

বাঁশখালি, কানসাট, নন্দিগ্রামসহ দেশের অনেকগুলো জায়গার মতো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জও দেখেছে এবার৷ কাকলি দেখেছেন ঘরের সব আসবাবপত্রের মতো শো-কেসটা শেষ, তার ওপরে সযত্নে রাখা কুরআন শরীফেরও অনেকটাই পুড়ে ছাই৷ স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময় ধর্ষণ, লুটপাট, হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেয়া হলো ঢাকায়, কাকলির মতো কমপক্ষে দু'শ পরিবারের সর্বস্ব গেল সুন্দরগঞ্জে৷ উন্মত্ততার আগুন ধর্মগ্রন্থ চিনলোনা, রাখলোনা কাকলির হারমোনিয়াম-তবলা, তানপুরা, এমনকি ১৬ মাস বয়সের শিশু সন্তানকে যে ফিডারে দুধ খাওয়াবেন সে উপায়ও ছিলনা৷ স্বামীর মাত্র তিন মাস আগে কিস্তিতে কেনা মোটর সাইকেলটা গেছে পুড়ে, বাড়ির বাইরের সব গাছ উপড়ে ফেলায় তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার আজ আক্ষরিক অর্থেই ধংসস্তুপ৷

Zerstörte Wohnhäuser in Sundorgonj Gaibandha Bangladesch
ছবি: Shayantani Twisha

এতদিন সেই ধ্বসস্তুপ থেকে দূরেই ছিলেন কাকলি৷ আত্মীয়ের বাসায় আর কতদিন থাকা যায়! দুদিন আগেই ফিরেছেন নিজের বাড়িতে৷ সংসার গোছানো শুরু করেছেন আবার শূন্য থেকে৷ তা-ও করতে হয়েছে আতঙ্ক নিয়ে৷ এখনো হুমকি দিয়ে যাচ্ছে জামায়াত শিবির৷ কাকলি বললেন, এবার হামলা চালালে জীবিত রাখা হবেনা- এ কথাও নাকি জানিয়ে দিয়েছে হুমকিদাতারা৷ পুলিশ তেমন কিছু করতে পারছেনা৷ প্রথম কারণ, অপর্যাপ্ত জনবল৷ তাছাড়া জামায়াত-শিবির হুমকি দিচ্ছে চরাঞ্চল থেকে, সংঘবদ্ধ একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেখানে গিয়ে অভিযান চালানোয় এমন কিছু ঝুঁকি রয়েছে যা এড়িয়ে এ মুহূর্তেই কিছু করতে যাওয়া ঠিক মনে করছেনা পুলিশ৷ তাই সুন্দরগঞ্জবাসীর এখনো আতঙ্কের মাঝেই বসবাস৷ জামায়াত-শিবিরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের তরফ থেকে বলার মতো কোনো সাহায্য-সহযোগিতা এখনো পাননি৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাফিজা বেগম জানালেন, হামলায় পুড়ে যাওয়া কিছু দোকানের জন্য নাকি মাত্র এক হাজার টাকা করে পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য