অ্যান্টিবায়োটিক
২৮ জুলাই ২০১৫ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আইসিইউ-এর রোগীরা অত্যন্ত দুর্বল, তাই তাদের জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি৷ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডা. মাটিয়াস প্লেৎস এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন৷ তিনি বলেন, ‘‘কাজ শেষ হলে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দিতে হয়৷ এ বিষয়ে আমরা বিশেষ নজর রাখি৷ ডাক্তারদের জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কঠিন, কারণ তাঁরা রোগীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চান৷ কিন্তু সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সবসময় ভালো নয়, কারণ রোগীরা পরে মাল্টিরেজিস্টেন্ট প্যাথোজেনের কারণে মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হতে পারেন৷ তাই রোগী সম্পর্কে ঠান্ডা মাথায় যুক্তি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ বেডের পাশে দাঁড়ানো ডাক্তারের জন্য সেটা উপলব্ধি করা প্রায়ই কঠিন হয়৷'’ মাটিয়াস প্লেৎস রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন৷ চিকিৎসার মেয়াদ ও অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ স্থির করতে হবে৷ দ্রুত নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়েছে৷ কিন্তু তা তৈরির কাজ বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল৷ নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসতে ১০ বছর সময় লাগতে পারে৷ ততদিন পর্যন্ত ডাক্তার ও নার্সরা যত দ্রুত সম্ভব জানতে চান, রোগীরা মাল্টিরেজিস্টেন্ট প্যাথোজেন হাসপাতালে নিয়ে আসছেন কিনা৷
কিছুদিন হলো, ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি করার আগে এমআরএসএ জীবাণু পরীক্ষা চালু হয়েছে৷ এই প্যাথোজেন সাধারণত ত্বক, নাক অথবা গলায় বাসা বাঁধে এবং মেথিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট হিসেবে পরিচিত৷ হাইজিন বিশেষজ্ঞ কনি গ্যোলিৎস বলেন, ‘‘বিশেষ করে যে সব রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশনের পরিকল্পনা রয়েছে, যারা বেশিদিন হাসপাতালে সময় কাটাবেন, তাদের ক্ষেত্রে এই জীবাণুর ঝুঁকি দূর করা অত্যন্ত জরুরি৷ তা না হলে ক্ষতে সংক্রমণ বা অন্যান্য রোগ হতে পারে৷ স্যাম্পল পাঠিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানা যায়৷ তখন স্থির হয়, রোগীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে কি না৷''
তবে এমারজেন্সির সময় এমন পরীক্ষার সময় থাকে না৷ তাছাড়া এখনো জার্মানির হাসপাতালগুলোতে এই মানদণ্ড বাধ্যতামূলক হয় নি৷ টহলের কাজ শেষ৷ নতুন এই কনসেপ্ট চালু করে মাটিয়াস প্লেৎস ও তাঁর সহকর্মীরা হাতেনাতে ফল পেতে শুরু করেছেন৷ রেজিস্টেন্সের ঘটনা ও তার ফলে সংক্রমণের প্রবণতা কমছে৷ ফলে রোগীদের লাভ হচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও জীবাণু এখনো ডাক্তারদের জন্য চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে৷
মাটিয়াস প্লেৎস বলেন, ‘‘ইনফেকশোলজি বা সংক্রমণ বিদ্যার বিশেষত্ব হলো, সম্পর্কটা শুধু শুধু রোগী, রোগ ও ওষুধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ এটা একটা ত্রিকোণ সম্পর্ক – রোগী, প্যাথোজেন ও সংক্রমণ মোকাবিলার ওষুধের মধ্যে৷ এর মধ্যে প্যাথোজেন রেজিস্টেন্স জিন পেয়ে বা অন্যভাবে সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হয়৷ তাই সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসাও প্রতি বছর বদলাতে হয়, রেজিস্টেন্স অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া নির্ধারিত হয়৷ চিকিৎসাবিদ্যার অন্যান্য ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না৷''
ডাক্তার ও গবেষকরা এর মধ্যেই অ্যান্টিবায়োটিক-পরবর্তী যুগের কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন৷ কারণ জীবাণু যে রেজিস্টেন্স গড়ে তুলছে, আজকের জ্ঞান দিয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷