অস্ত্রের ‘জীবনচক্র’
৭ জানুয়ারি ২০১৩জার্মানিতে অস্ত্রের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে এতকাল কমই জানা গিয়েছিল৷ অস্পষ্ট ধারণার উপর ভিত্তি করে এতকাল বলা হয়েছে, এই দেশে পাঁচ থেকে দশ মিলিয়ন অস্ত্র রয়েছে৷ কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে এই অবস্থা বদলে গেছে৷ গত কয়েক মাসে জার্মানির ৫৫০টি আঞ্চলিক অস্ত্র কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে থাকা তথ্য উপাত্ত পাঠিয়েছে নতুন কেন্দ্রীয় অস্ত্র নিবন্ধন কেন্দ্রে৷
পহেলা জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে এই কেন্দ্র, যেটি আমাদেরকে জানাচ্ছে জার্মানিতে এখন বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫.৫ মিলিয়ন৷ ১.৫ মিলিয়ন মানুষের কাছে এসব অস্ত্র রয়েছে৷
নতুন অস্ত্র নিবন্ধন প্রক্রিয়া
কোলনভিত্তিক কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কার্যালয় এই নতুন অস্ত্র নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে৷ এই কেন্দ্র অস্ত্রের মালিকের নাম, ঠিকানা, লিঙ্গ, জন্মতারিখসহ সুনির্দিষ্টভাবে অস্ত্রের বর্ণনা এবং সিরিয়াল নম্বর জমা রাখছে৷ এর অর্থ হচ্ছে, এখন কোনো অস্ত্র হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটির মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ অতীতে অস্ত্রের মালিক খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ছিল৷ এখন সেটি বেশ সহজ হয়ে গেল৷ তবে অস্ত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনই শেষ হচ্ছে না৷
আগামী বসন্ত নাগাদ আরেকটি কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ৷ তা হচ্ছে অস্ত্রের ‘জীবনচক্র' সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ৷
জীবনচক্র
এখন পর্যন্ত বৈধভাবে অস্ত্র কেনার পর সেটি নিবন্ধন করার নিয়ম চালু রয়েছে৷ ‘কিন্তু নির্মাতা সেটি তৈরি করার পর থেকে বিক্রি পর্যন্ত অস্ত্রটির একটি জীবনকাল রয়েছে', বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র বিভাগের পরিচালক ইওয়াখিম স্ট্যর্ম৷ কেন্দ্রীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়ারও প্রধান তিনি৷ স্ট্যর্ম বলেন, ‘যদি একটি প্রতিষ্ঠান অস্ত্র তৈরি করে, তাহলে সেটি অস্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও প্রস্তুত করবে এবং তা নিবন্ধন কেন্দ্রে পাঠাবে৷ তখন একটি অস্ত্র তৈরি থেকে শুরু করে সেটি ধ্বংস পর্যন্ত সময়কাল মানে জীবনচক্র সম্পর্ক তথ্য আমাদের কাছে থাকবে৷'
অস্ত্র সংরক্ষণ
অস্ত্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একটি বিষয় বারবার উঠে আসছে৷ প্রায়শই দেখা যায়, একটি অস্ত্র যখন অবৈধ কাজে ব্যবহার হচ্ছে, তখন সেটি প্রকৃত মালিকের কাছে থাকছে না৷ বরং সেটি ব্যবহার করছে অন্য কেউ৷ উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে স্কুলগুলোতে সংঘটিত হওয়া শুটিং তাণ্ডবের কথা৷ তাতে দেখা গেছে, স্কুলে আক্রমণকারী ব্যক্তিটি তার নিজের অস্ত্র ব্যবহার করেনি৷ বরং পিতামাতার জিনিসপত্র রাখার ছোট্ট কক্ষ থেকে বা বাসার অন্য কোথাও থেকে সেটি চুরি করে এনেছে সে৷ অস্ত্র নিরাপদ জায়গায় তালাবদ্ধ করে না রাখায় এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷
জার্মানির ক্রীড়াঅস্ত্র এবং গুলি নির্মাতাদের সংগঠন জেএসএম প্রধান ক্লাউস গ্যোটসেন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আপনি চাইলেই বাড়ির মধ্যে অস্ত্র ফেলে রাখতে পারেন না৷ অস্ত্র আইনে সেটি সংরক্ষণের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে এবং সেটা অনুসরণ করতে হবে৷''
প্রসঙ্গত, জার্মানিতে বৈধ অস্ত্র এখন সহজে সনাক্ত করা সম্ভব হলেও অবৈধ অস্ত্র কিন্তু থেকে যাচ্ছে একরকম ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যাও অনেক৷ ফলে এসব অস্ত্র নিয়েও ভাবতে হচ্ছে৷ তবে নতুন প্রক্রিয়ায় আরো সুবিধা যেটা হলো, তা হচ্ছে কোন অস্ত্র পুলিশের কাছে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জানা যাবে সেটি বৈধ নাকি অবৈধ৷ এটাও বড় অগ্রগতি বৈকি৷