সৌদি মেয়ে ক্রীড়াবিদ
২ আগস্ট ২০১২এবারের অলিম্পিক আসরের আগে তিনটি দেশ কখনই প্রমীলা ক্রীড়াবিদদের এমন আসরে পাঠায়নি৷ দেশগুলো হলো সৌদি আরব, ব্রুনেই এবং কাতার৷ কিন্তু এ বছরের শুরুতেই ব্রুনেই এবং কাতার নিশ্চিত করে যে, লন্ডন অলিম্পিকে তাদের প্রতিনিধি দলে থাকবে প্রমীলা ক্রীড়াবিদরাও৷ আর অলিম্পিক আসর শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরব নিশ্চিত করে এবারের আসরে তাদের প্রমীলা ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের কথা৷ তবে সেজন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক পরিষদ - আইওসি'কে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ বেশ কিছুদিন ধরে চলে এ ব্যাপারে দেন-দরবার৷ এমনকি মানবাধিকার সংস্থাগুলো আইওসি'র প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যে, সৌদি আরব প্রমীলা ক্রীড়াবিদদের না পাঠালে তাদের অংশগ্রহণ বাতিল করতে হবে৷
যাহোক, শেষ পর্যন্ত ওয়াজদান আলি সিরাজ আব্দুলরাহিম শাহেরকানি এবং সারাহ আত্তার'কে লন্ডন অলিম্পিক আসরে পাঠাতে সম্মত হন সৌদি কর্তৃপক্ষ৷ শাহেরকানি জুডো এবংআত্তার ৮০০ মিটার দৌড়ে নামার কথা রয়েছে৷ লন্ডন আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই দুই নারী ক্রীড়াবিদকে দেখা গেছে পুরুষ ক্রীড়াবিদদের পেছনে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে৷ তবে এই অনুষ্ঠানের পর সৌদি নারী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে শুরু হয়েছে অনলাইন বিতর্ক৷ সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় যুক্ত হয়েছে হাজার হাজার মন্তব্য৷ অনেকে তাদের ‘বেহায়া' বলে সমালোচনা করলেও তাঁদের সাহসী এই পদক্ষেপের জন্য বাহ্বাও দিচ্ছেন অনেকে৷
সৌদি আরবের রক্ষণশীল মুসলিম ধর্মীয় বিশ্লেষকরা নারীদের খেলাধুলার বিরোধিতা করে আসছেন৷ তাদের যুক্তি, এটি নারীর জন্য অশোভনীয় এবং তাদের সহজাত বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে যায়৷ লন্ডনে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর টুইটার-এ সেঁটে দেওয়া বার্তায় এমন মন্তব্য এসেছে৷ তবে সেগুলোর পাল্টা বক্তব্যও চোখে পড়ার মতো৷ টুইটারে আরবি ভাষায় দেওয়া একটি শিরোনামের ইংরেজি অনুবাদ দাঁড়ায় ‘অলিম্পিক হোরস'৷
সেখানে খালেদ আল জাবরি লিখেছেন, ‘‘তাদের অর্থাৎ শাহেরকানি এবং আত্তার'এর অলিম্পিক আসরে অংশগ্রহণকে লজ্জাজনক এবং পাপ বলতে দ্বিধা করার কোন কারণ নেই৷'' টুইটার-এ আল জাবরি'র পরিচয় থেকে জানা গেছে, তিনি একজন সৌদি নাগরিক এবং জিদ্দাহ থেকে টুইট করেছেন৷ এমলোভেন২১০০ নামের একটি টুইট'কারী লিখেছে, ‘‘তারা অলিম্পিকের হোরস তথা বেশ্যা .....তারা সেখানে দৌড়াতে চায় এজন্য যে, কখনও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে যাবে এবং তাদের শারীরিক সৌন্দর্য দেখা যাবে৷'' এই টুইট'কারীও নিজেকে একজন সৌদি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে৷
তবে সৌদি নারী ক্রীড়াবিদদের বিরুদ্ধে প্রচারণার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা এই টুইট শিরোনামের মধ্যেই আবার দেখা গেছে শাহেরকানি এবং আত্তার'কে সমর্থনকারী ভক্তদের মন্তব্যও৷ রিয়াদ থেকে সৌদি আরবের এক সম্ভ্রান্ত বংশের সদস্য ফাহাদ আল-ইনসি লিখেছেন, ‘‘অলিম্পিকে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণে আমি গর্বিত৷'' এছাড়া সাফা নামের এক সৌদি নারী লিখেছেন, ‘‘সৌদি প্রতিনিধি দলের পেছনে হলেও অলিম্পিক আসরে তাদের পথচলা ঐতিহাসিক ঘটনা৷ পরবর্তীতে আমরাই পতাকা বহন করবো পুরুষদের পাশাপাশি এবং সমান তালে৷''
এবারের অলিম্পিকে নারী ক্রীড়াবিদ পাঠানোর সৌদি সিদ্ধান্ত অবশ্য হুট করেই আসেনি৷ বরং সংস্কারবাদী বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র গত ১৮ মাস ধরে সেখানে নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে অধিকতর সুবিধা প্রদানের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে৷ গত বছর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন নারীদের স্থানীয় পৌরসভার নির্বাচনে ভোট দান এবং পরামর্শ সভায় যোগদানের অধিকার প্রদানের পরিকল্পনা৷ এরপর অলিম্পিকে নারী ক্রীড়াবিদ পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন বাদশা আব্দুল্লাহ৷
সৌদি আরবের ভেতরেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হলেও প্রখ্যাত ধর্ম বিশারদরা অবশ্য অলিম্পিক আসরে নারী ক্রীড়াবিদ পাঠানোর ব্যাপারে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেননি৷ কারণ এমন সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে - সেটা তাঁরা জানেন৷ কারণ এর আগে নারীদের অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করায় বাদশা আব্দুল্লাহ বেশ কিছু ধর্ম বিশারদকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন৷
এদিকে, মাথায় হিজাব পরে জুডো'তে অংশ নেওয়ার অনুমতি এখনও পাননি শাহেরকানি৷ আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশনের প্রধান মারিয়ুস ভিজার এখনও এই অবস্থানে অনড় যে, নিরাপত্তা এবং খেলার বিধানের কারণেই শাহেরকানি'কে হিজাব পরে খেলতে দেওয়া যাবে না৷ ফলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন শাহেরকানি৷ অথচ আগামী শুক্রবারই রয়েছে তাঁর খেলা৷
এএইচ / আরআই (রয়টার্স, এএফপি)