অবশেষে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে খসড়া চুক্তি
৩ এপ্রিল ২০১৫টানা আট দিনের আলোচনা শেষে অবশেষে একটা সমঝোতা হয়েছে লোসান-এ৷ সুইজারল্যান্ডের এই শহরে ইরানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের আলোচনা গত ৩১ মার্চই শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয়৷ আট দিন পর দু-পক্ষ খসড়া চুক্তিতে সম্মত হয়েছে৷
এ চুক্তি অনুযায়ী ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ধীরে ধীরে কমাবে৷ চুক্তিতে বলা হয়েছে, ইরান তার পারমাণবিক শক্তি দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনবে৷ এছাড়া পরমাণু গবেষণাও ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে৷ চুক্তি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)৷ সবকিছু চুক্তি অনুযায়ী হলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে তুলে নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে খসড়া চুক্তি নিয়ে এখনো দু পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলবে৷ আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মূল চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে৷
খসড়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই খুশিতে মেতেছে ইরান৷ তেহরানের রাস্তায় শত শত মানুষ গাড়ির হর্ন বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ ফেসবুকে এক দল তরুণী উল্লাস প্রকাশের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে, যেখানে হাততালি বাজাতে বাজাতে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির উদ্দেশ্যে তাঁরা বলছেন, ‘‘ধন্যবাদ রোহানি''৷
ইরানে জনমনে উল্লাসের ঢেউ লাগলেও বিশ্বনেতৃবৃন্দ এখনো খসড়া চুক্তি নিয়ে সতর্কভাবেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অতীতে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, এটাও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে৷ খসড়া চুক্তিটিকে ‘ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত এক ‘ঐতিহাসিক সমঝোতা' হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি৷ তবে ওবামা পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, ‘‘খসড়া চুক্তির সাফল্য সম্পর্কে এখনি নিশ্চিত হওয়া যাবেনা৷''
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ খসড়া চুক্তিকে স্বাগত জানালেও এর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন৷ ব্রিটেনও তা-ই মনে করে৷ তবে রাশিয়া বিষয়টিকে দেখছে একটু অন্যভাবে৷ তারা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কট নিরসনে ইরানের প্রভাব এবং ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া হলেই কেবল এ চুক্তি বিশ্বশান্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখতে পারবে৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যাশিতভাবেই এই চুক্তির চরম বিরোধিতা করেছেন৷ শুরু থেকেই তাঁর ঘোষিত অবস্থান ছিল, এমন এক চুক্তি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলবে৷
এসিবি/এসবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)