অপারেশন থিয়েটারে হাতের ইশারায় হবে কাজ!
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘নেসেসিটি ইজ দ্য মাদার অফ ইনভেনশন'৷ খুব গতানুগতিক চিন্তা করলে আলেকসান্দ্রে কাম্পোস হয়ত যে তিমিরে ছিলেন সে তিমিরেই থেকে যেতেন৷ ভাবলেই হতো, অস্ত্রোপচার করতে গেলে হাত দুটো ভালো করে ধুয়ে নিলেই চলে৷ তারপর বাকি কাজ তো এমনি এমনিই হয়ে যাবে৷ কিন্তু আসলেই কি তা হয়? পর্তুগালের এই নিউরোসার্জন দেখেছেন তা সবসময় হয় না৷ বিশাল মনিটরে রোগীর মস্তিষ্কের ভেতরের খুঁটিনাটি খুব ভালো করে দেখে নিতে হয় তাঁদের৷ দেখতে গিয়ে নিতে হয় কম্পিউটারের সহায়তা৷
হ্যাঁ, কম্পিউটারের মাউস নেড়ে নেড়েই বিশাল মনিটরে দেখে নেয়া যায় মস্তিষ্কের কোথায় কী কী আছে, বুঝে নেয়া যায় কোন জায়গাটা কতটুকু কাটাছেঁড়া করলে মুমূর্ষু রোগীকে নতুন জীবন দেয়া যাবে৷ কিন্তু মাউস নেড়ে দেখে দেখে অস্ত্রোপচার করলে আর এত হাত-মুখ ধুয়ে, বিশেষ পোশাক পরে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা করে কী লাভ? মাউস থেকেও তো আসতে পারে জীবাণু , সে জীবানু রোগীর শরীরে গেলে বরং চিকিৎসকের অবহেলার কারণে মৃত্যুও হতে পারে!
সে রকম আশঙ্কা দূরে রাখতে এতদিন অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারি বোঝেনই না এমন একজন লোকের সহায়তা নিতেন আলেকসান্দ্রে কাম্পোস৷ তিনি যেভাবে চাইতেন লোকটা শুধু মাউসটা সেভাবে নেড়ে যেতো৷ মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলোকে এভাবেই দেখে নিতেন কাম্পোস৷ কিন্তু অস্ত্রোপচারেরর সময় আরেকজনকে এত বলে বলে ছোট্ট একটা কাজ করানোও তো বিরক্তিকর৷ সেই সমস্যা সমাধানের ভারটাই কাম্পোস দিয়েছিলেন ওয়াইড্রিমসকে৷ ইন্টারেকটিভ টেকনোলজিতে পর্তুগালের অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠান কাজটা করতে খুব একটা সময় নেয়নি৷ কাম্পোসের সঙ্গে কয়েক দফা বসে, তাঁর চাহিদাটা বুঝে ঠিক উদ্ভাবন করে ফেলেছে অপারেশন থিয়েটারে সার্জনদের জাদুকর হয়ে ওঠার উপায়৷ এসে গেছে ‘ওয়াইস্কোপ'৷
ভাবছেন ‘ওয়াইস্কোপ' আবার কী! বলতে পারেন এটা এমন এক সফটঅয়্যার যা হাতে পেয়ে কাম্পোস এখন আর শুধু নিউরোসার্জন নন, ছোটখাটো জাদুকরও৷ তাঁর অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলে দেখতে পাবেন কাম্পোস অস্ত্রোপচার করার সময় কখনো মনিটরের দিকে বাড়িয়ে হাত খুলছেন রোগীর মস্তিষ্কের কোনো একটা অংশ অমনি বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, তারপর হয়ত হাত বন্ধ করছেন অমনি আরেকটা অংশ ছোট হয়ে দেখা দিচ্ছে বড় পর্দায়৷ ধীরে ধীরে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়বে ‘ওয়াইস্কোপ'৷ আমাদের দেশেও শিগগিরই হয়তো দেখা যাবে অস্ত্রোপচারের সময় সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর রিপোর্ট দেখার সময় সার্জনই হয়ে উঠছেন জাদুকর৷
প্রতিবেদন: গুলহেমে কোরেইয়া দা সিলভা/এসিবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ