অনলাইনে কম হয়রানির শিকার হয় জার্মান শিশুরা
৬ নভেম্বর ২০১০সম্প্রতি লুক্সেমবুর্গে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং লন্ডন স্কুল অফ সার্ভে -এর এই সমীক্ষাটির ফল প্রকাশ করা হয়েছে৷ দেখা গেছে, ইউরোপে প্রতি আটজন শিশুর মধ্যে কমপক্ষে একজন কোন না কোনভাবে ইন্টারনেটে অনলাইন বিভিন্ন সাইট বা এর কনটেন্টের কারণে অস্বস্তি আর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে৷ অবশ্য বাকি শিশুদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট তেমন কোন নেতিবাচক ভূমিকা রাখে না বলেই গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ইউরোপিয় ইউনিয়নের ‘রিস্কস অ্যান্ড সেফটি অন দ্য ইন্টারনেট' শীর্ষক গবেষণাটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক শিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল৷ সেখানে প্রায় হাজারেরও বেশি শিশুর ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ এর মধ্যে আয়ারল্যান্ড থেকে শুরু করে তুরস্কের শিশুরাও রয়েছে৷ অধিকাংশ শিশুই অবশ্য ইন্টারনেট ব্যবহার কিম্বা এর কোন কনটেন্টের কারণে তাদের কোন নেতিবাচক অনুভূতি, অস্বস্তি বা সমস্যার কথা বলে নি৷
তবে দেখা গেছে, বাচ্চাদের ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মা-বাবাদের ভূমিকাটি একেবারেই গৌণ৷ অধিকাংশ বাবা-মা'ই সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টি থেকে যোজন দুরে অবস্থান করেন৷ তারা সন্তানদের এই বিষয়টি সম্পর্কে কোনকিছুই জানেন না৷
দেখা গেছে প্রায় ১২ ভাগ শিশু কোন না কোনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে বা অনলাইনে কোন কনটেন্ট এর কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে, অস্বস্তি বোধ করেছে৷ এর মধ্যে যেমন রয়েছে পর্নোগ্রাফি, তেমনি আবার অনলাইনে যৌনাত্মক কথা-বার্তা অথবা গালাগালিও তাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে৷ কখনো দেখা গেছে, ইন্টারনেটে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে৷
জানা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ৩৯ ভাগ শিশু যাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তারা কি কখনো অপরিচিত কোন মানুষ অথবা অনলাইনে অন্য কারো পাঠানো তথ্যের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছে? এইসব শিশুদের সামান্য অংশই উত্তরে হ্যাঁ বলেছে৷ অর্থাৎ স্বল্পসংখ্যক শিশুই অনলাইনে এইসব কনটেন্ট এবং পরিস্থিতর কারণে বিব্রত হয়েছে৷
জার্মানিতে প্রতি একশো জনে আট জন শিশু এধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বলেই গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ পর্তুগালে সাত জন আর ইতালিতে একশো জনে মাত্র ছয়জন শিশু এধরণের সংকটে পড়ে৷ এদিকে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি অনলাইন হয়রানির শিকার হয় ডেনমার্কের শিশুরা, একশো জনে ২৬ জন আর এরপরে রয়েছে এস্টনিয়া এবং রুমেনিয়ার শিশুরা৷ এস্টনিয়ায় একশো জনে পঁচিশ জন আর রুমেনিয়ায় প্রতি একশো জনে একুশ জন শিশু এমনতরো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে৷ সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে-জার্মানির শিশুরা এদিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে৷
আবার যেদেশের শিশুরা ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা বেশি পায় সেদেশেই এই ঝুঁকিটি বেশি এমন কথাও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে৷ কিন্তু এর বিপরীত কথাই বলেছেন জার্মানির এক বিশেষজ্ঞ৷ তার মতে ডেনমার্কের চাইতে জার্মানির শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে নেই৷ এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারা অনলাইনে কোথায় কোথায় যাচ্ছে৷ জার্মানির শিশুরা বয়সোপযোগী নির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগের মধ্যেই তাদের অনলাইন তৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখে৷ সম্ভবত এরমধ্যেই তারা তাদের কাঙ্খিত বিষয়গুলোর দেখা পেয়ে যায়৷ এটি একটি মুখ্য কারণ৷ অন্য দেশে সম্ভবত এমনটি ঘটে না৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক