1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অধিক সন্তান জন্ম দেয়ার চাপে ক্লিষ্ট আফগান মেয়েরা

১২ জানুয়ারি ২০১২

আফগানিস্তানে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে৷ যুদ্ধের এই ডামাডোলের মধ্যেও দেশের জনসংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলেছে৷ প্রায় তিন কোটি মানুষের বাস সেখানে৷

https://p.dw.com/p/13i0W
চাপের মুখে আফগান মেয়েরাছবি: Reza Shirmohammdi

যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে – সেটা কি কোন শুভ সংবাদ? বলা কঠিন৷ কারণ আফগানিস্তান দেশটি যেন অনড় হয়ে আছে৷ দেশের অবকাঠামো বলে কিছু নেই৷ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত লক্ষ লক্ষ শিশু৷ কর্মসংস্থানেরও কোন সুযোগ নেই৷ বেকার হয়ে বসে আছে কর্মক্ষম একটি প্রজন্ম৷ কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে মেয়েদের ওপর অধিক সন্তান জন্ম দেয়ার চাপ৷ হাওয়া ধাত্রী হিসেবে কাজ করেন৷ তিনি জানান,‘‘আমাদের গ্রামে একটি মহিলাকে অন্তত চারটি সন্তানের জন্ম দিতেই হবে৷ সবচেয়ে ভাল হয় যদি সবগুলোই পুত্রসন্তান হয়৷ আমাদের স্বামীরা পুত্রসন্তান পছন্দ করে বেশি৷''

দাইকুন্দি গ্রামের ধাত্রী হাওয়া নিজেও পাঁচ সন্তানের মা৷ গড় অনুপাতের চেয়ে তার একটি সন্তান কম৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি আফগান নারীর রয়েছে ৬ টি সন্তান৷ বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা তিন কোটি৷ দেশটিতে শিশু মৃত্যুহার অনেক বেশি৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ এবং শিশুমৃত্যুর উঁচু হারের পরও ৩০ বছর পর আফগানিস্তানের জনসংখ্যা দ্বিগুন হবে৷ অর্থাৎ ৩০ বছর পর আফগানিস্তানে বসবাস করবে ৬ কোটি মানুষ৷

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন নাদরা হায়াত৷ তিনি বললেন,‘‘ আফগানিস্তানে ধর্মীয় নেতারা অনেক সন্তান জন্মের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে৷ শুধু তাই নয় দেশটির সংস্কৃতিও অনেক সন্তানদের ঘিরেই৷ বিশেষ করে পুত্রসন্তান৷ আমাদের ধর্মীয় নেতারা সবসময়ই বড় বড় পরিবার গড়ার কথা বলেন৷ বেশি করে পুত্রসন্তান চাই – এ ধরণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন৷''

প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন পুরুষ না হয় এই কথা বলল কিন্তু যে মেয়েটি মা হবে তার ভাষ্য কী? বাস্তব সত্য হল সেই মেয়েটির কোন মতামতই নেয়া হয় না৷ তার প্রয়োজন পড়ে না৷ একটি মেয়েকে অন্তত তিন চারটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিতেই হবে৷ ধরে নেয়া যাক একটি মেয়ের তিনটি কন্যাসন্তান এবং মাত্র একটি পুত্রসন্তান রয়েছে৷ তাকে আরো তিনটি পুত্রসন্তান স্বামীকে উপহার দিতে হবে৷ সমাজও আশা করে যে, মেয়েটির চারটি পুত্রসন্তান থাকবে৷ এর অন্যতম কারণ হল বৃদ্ধ বয়সে পুত্রদের কাছেই বাবা-মায়েরা সাধারণত থাকেন৷ দেখাশোনার জন্য লোক চাই৷ এবং তা হতে হবে নিজস্ব পরিবারের মধ্যে থেকে৷ নাদরা হায়াত আরো জানান,‘‘আমাদের দেশের শতকরা ৪৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে৷ এ হল এই দেশের অনেক বড় একটি সমস্যা৷ আফগানিস্তান হচ্ছে এই অঞ্চলে নবম দেশ যেখানে জন্মহার অত্যন্ত বেশি৷ আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি৷ গোটা দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষের বয়স ২৫ বছরের নীচে৷''

Afghanische Frauen
সন্তানসহ মায়েরা

আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান সীমা সামার বেশ স্পষ্ট করেই তুলে ধরেন আরো অনেক সমস্যার কথা৷ পেশায় সীমা সামার একজন চিকিৎসক৷ সীমা সামার জানান,‘‘জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে পারবো না৷ শিক্ষার সুযোগ নেই ৷ সমানাধিকার নেই৷ মানুষ এখানে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে৷ স্বাস্থ্যনীতি, যক্ষা এবং এইচআইভি প্রতিরোধে যা করা প্রয়োজন তার কোনটাই আমরা করতে পারছি না৷''

সীমা সামার আরো জানান, দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে৷ আফগান সরকারও এ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে৷ কনডোম, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরও কেউ এগিয়ে আসছে না৷

আফগানিস্তানে ধাত্রীদের একটি সমিতি আছে৷ সেই সমিতির প্রধান সাবরা তুর্কমানি৷ তিনি মনে করেন, ধাত্রীদেরও এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন৷ তারাও প্রয়োজনে মায়েদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন৷ তবে তিনি জানান, ঐতিহ্য এবং দেশের সংস্কার সবচেয়ে বড় বাধা৷ তুর্কমান জানান,‘‘আমাদের সমাজে একজন স্ত্রীর মতামতের কোন মূল্য নেই৷ তার স্বামী এবং তার শাশুড়ি সব সিদ্ধান্ত নেয়৷ ছেলের বউ কবে সন্তান জন্ম দেবে, ছেলে হতেই হবে৷ মেয়ে হয়েছে তাহলে আরেকবার চেষ্টা করে দেখা যাক এবার ছেলে হয় কি না – এসব সিদ্ধান্ত সাধারণত শাশুড়িই নেয়৷ বাড়ির বউয়ের কথা বলার অধিকার নেই৷ তার নিজের শরীরের ওপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই৷ তাই আমরা ধাত্রীদের বলি শুধু মেয়েটিকে নয় যখন পরামর্শ দেয়া হয় তখন যেন শাশুড়িও সামনে থাকে৷ সরাসরি যেন তাকেও বোঝানো হয়৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য